Sunday 9 October 2022

তুষারকান্তি ঘোষ এর কবিতা // ই-কোরাস ৭৭

 




তুষারকান্তি ঘোষ এর কবিতা  

আত্মানুসন্ধান


রাত্রি যখন গ্রাস করে, সাপের মতন গিলতে আসে

আমি পথ চলতে শুরু করি


শহর জুড়ে নিঃস্তব্ধতা 

ছায়াপথ এঁকেবেঁকে চলে যায় নক্ষত্র-সান্নিধ‍্যে 


আমি কে? আমি কি আমিই আছি?

জ‍্যোৎস্না ভাঙতে ভাঙতে এক একাকী পাখির মত বিচরন করি  


দিন নয়,রাত নয়, সব শূন‍্যতা শেষে 

খুব ভোরে গন্ধরাজের গন্ধ  নিই, শিশিরভেজা শিউলি কুড়াই তোমার জন‍্য 


আমি কে? আমি কি নারী অথবা পুরুষ?

এক শরীরে অসংখ‍্য যুগলমুর্তি

বিক্রীত স্থাপত‍্য নই, নই বিকারগ্রস্ত


এই নাটকে দুটি চরিত্র, তুমি আর আমি 

কাছে আসি,দূরে যাই, একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাাঁদি, চুমু খাই…

……………………



বৃষ্টি-সন্ধ‍্যা


সন্ধানী চোখ খুঁজতে থাকে লতানো গাছের মত সন্ধ‍্যার অলস ভঙ্গিমা।


তখন বৃষ্টি পড়ছিল খুব। সব সীমাবদ্ধ ঘরের ভিতরে।ঈশাণের খ‍্যাপা হাওয়া সোঁ সোঁ ডাকে। 


মালতীসন্ধ‍্যার বাসনা  সঙ্গী পাখিকে চায়। পাখিরা যথারীতি ঘরে ফিরে যায়।


কেউ নামতা পড়ে, কেউ নামাজ, কেউ কেউ বিরক্ত বোধ করে আজ পরকীয়া হল না বলে। 


শ্বশানে নিভেছে চিতা, সব আকাঙ্ক্ষা কি জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে?


একা স্বৈরিণী ল‍্যাম্পপোষ্টের নীচে দাঁড়ায়।তার মত কেউ জানে না বাঁচতে গেলে কি কি করনীয় আর!


কবি খুব ক্লান্ত বোধ করে, খুব ক্লান্তিতে ঘুম আসেনা তার।

………………….......


জন্মদিন


মরুভূমির মাঝে হেঁটে যেতে যেতে যখন আমার চামড়া আধপোড়া বাদামী হয়ে যায়, আমি  এ নদী সে নদী পেরিয়ে এসে ঝর্ণা থেকে জলপ্রপাতের শব্দ শুনতে পাই,

স্নান করি প্রাণভরে


সমুদ্র রক্তে লাল হয়ে উঠলে আমি ছোট্ট ডিঙিতে  উঠে তীরে চলে যাই,, ভাসানের বাজনা পেরিয়ে আমি আকাশ থেকে  প্রর্থনা সংগীত  শুনি 


ঠিক মৃত‍্যুর আগে জীবনে এক অনিবার্য সংকেত থাকে।

এ পৃথিবী চিরকাল গোপন ও রহস‍্যময়, উদাসীন, সারল‍্যের কিছু পুরষ্কার থাকে, গাছের প্রতিটি পাতায় ধরে রঙ, জন্মদিন  ফিরে ফিরে আসে

…………………...........



প্রিয়তমাসু

( কিশোর তব দুয়ারে আজি পরান মম জাগে )


তোমার নীরবতার ভিতর জেগে থাকে শিশিরবিন্দু

চোখের পাতায় ফুটে থাকে ভারহীন শব্দমালা 

তুমি আমার সেই তারা যাকে দেখে নাবিকেরা দিক ঠিক করে 


 কতদিন একসাথে কেটে গেল!  স্মৃতি ফিরিয়ে দেয় দুপাশের মেহগিনি গাছ, চেনা নদী, ধূলোমাখা পথ ,

পানগুমটি পেরিয়ে  এসে তোমাকে দেওয়া প্রথম প্রনয়-প্রস্তাব… মনে পড়ে?


আজন্ম-চেনা বাড়িতে এসে তুমি সরিয়ে দিলে সব ঝরাপাতা, সব ভূল ক্ষমা করে আশ্রয় দিলে তোমার স্তনের ছায়ায় 


আমি জানি, আমি তোমার ব‍্যক্তিগত পাখি,  যাত্রীবিহীন স্টেশনে শীতের অবেলার সাথী, কৃষ্ণচূড়া গাছের নীচে  চিরদিন বাঁশি হাতে প্রতীক্ষায় থাকা   নওল-কিশোর, যাকে ছাড়া  একদিনও থাকতে পার না তুমি… 

…………………........


আমার কবিতা


কবিতা লিখতে গেলে স্থিরতা চাই,

আলো ও জ‍্যোৎস্না চাই এমন কোন মানে নেই 


এ জীবন সন্দেহ আর অবিশ্বাসে ভরা 

মানুষ নিজের ছায়াকেও ভয় পায়, তবু

 আমরা সবাই জানি; চাঁদের কলঙ্ক

পূর্ণিমারাতেই বেশি প্রতিভাত হয়   

ছায়া দীর্ঘ হলে শৃগালের মত আমাদের ধূর্ততাও বাড়ে 


কবিতা লেখার জন‍্য এক গোধূলিবেলায়  আমি এক চন্ডালিকার হাত থেকে জল পান করেছিলাম, হারিয়েছিলাম নিকটজনের বিশ্বাস 


আমার কারো কাছে কিছু প্রমান করার নাই  

স্বাভাবিক নিয়মেই নদী পথ বদলায় 

 ম‍্যাজিকের মত ভালোবাসার নারী মিলিয়ে যায়, ফিরে আসে  


আমি জানি বিপুল অগ্নিদাহ নিয়েও কবিতা লেখা যায় 

কবিতা লেখার জন‍্য স্থির ও সংযত হতে হবে এমন কোন মানে নাই 


আমার কবিতায় সর্বনাশের ভিতর লেখা হয় সুখ  

 জমাট অন্ধকারে ফুটে ওঠে  ভেলভেটের মত কালো গোলাপ, শুধু  বেঁচে থাকার জন‍্য এক বিরল ও বিস্ফোরক ভালোবাসা 

……………………........


ভরা আশ্বিন


ভাদ্রও শেষ হয়ে গেল

যা কিছু অবহনযোগ‍্য তা ত‍্যাগ করাই ভালো 


নদী ভরন্ত, ভেসে যেতে নৌকা চাই 

চাই স্নিগ্ধ বাতাস, কমলা-কোয়া রোদ

কাকভোরে ঘুম থেকে উঠে 

সূর্যস্তব করতে চাই ব্রাহ্মণের মত


সবুজ ধানের খেত, ফুল এসেছে সবে, গাছ ফলবতী হবে

সীমাহীন দিগন্তরেখা পেরিয়ে সব কথা ব‍্যপ্ত হবে রাত্রির  আকাশে 


অতীত প্রেমিকারা সুখে থাক

দিকভ্রান্ত নাবিক খুঁজে পাক হারানো কম্পাস


 আশ্বিনের ভরন্ত চিবুক আধফোটা শিউলির মত ছুঁয়ে থাক বুক 


যে ভালোবাসা একদিন হারিয়ে গেছল সে আবার ফিরে আসুক বাতাবি-লেবু-ফুলের গন্ধ নিয়ে আশ্বিন-সকালে 

………………….........


আত্মপোলব্ধি 


কোনদিন গায়ের উপর এমন আলো পড়বে ভাবতেও পারিনি


সন্ন‍্যাসীর পদপ্রান্তে এতদিন বসে থেকেও পায়নি

কোন শুভ সংকেত কেউ দাম দেয়নি চোখের জলের

একা একাই দিন কেটেছে এমনই কি ভবিতব‍্য ছিল?


উড়নচন্ডী জীবন ভুল মানুষের কাছে যায়, ভুল কাজ করে, উপেক্ষা করে আলোর ডাক পৃথিবী ঘুরছে


গ্রীষ্ম বেরিয়ে বর্ষা আসে, বর্ষা পেরিয়ে শরৎ,  একদিন আশ্বিনের প্রথম সকালে নন্দনকাননের অলিন্দে ফুল ফোটে, আয়নায় মুখোমুখি হই নিজের, পর্দা সরিয়ে জানতে পারি ভেতর বাড়ির গল্প 


তখন পাখির চোখ ফোটে, পাখি ডানা মেলে,পাখি উড়ে,পাখি গান গায় 


গুপ্তঘাতকেরা সর্পাষদ গুহার ভিতর ঢুকে গেলে, আমি নৌকা ভাসাই বাওরের জলে 

………………….




সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ - নিজস্ব

ঠিকানা -সুরতপুর,  দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১

কথা - 9434453614







No comments:

Post a Comment

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বন্ধ সিনেমাহলের কথা // ই-কোরাস ২০

  পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বন্ধ সিনেমাহলের কথা ২০ রূপছায়া টকিজ – বালিচক শ্রীজিৎ জানা সিনেমাহলে প্রবেশের আগে, এক প্রস্থ অন্য কথা হোক। আরে মশাই!...