তপনজ্যোতি মাজি এর গুচ্ছ কবিতা
সুন্দরের কাছে প্রণত
সুন্দরের কাছে প্রণত হলো মন। সিঁড়ির ধাপে ধাপে
ঝরে পড়েছে সুন্দরের রেনু। ঝাঁকি দিয়ে কেউ যেন
নাড়িয়ে দিয়েছে সোনাঝুরি গাছ।
এমন সুন্দরের স্পর্শ পেতে ভিক্ষু হতে পারি।
জন্মান্তর জুড়ে বিস্তৃত বিশ্বাস সঙ্গে নিয়ে হেঁটে যেতে পারি।
তীর্থপক্ষীর মতো বসে আছি মন্দির প্রাচীরে।
দেবী আজ হলুদ চন্দনে স্বর্ণবর্ন, ওষ্ঠে দ্বিতীয়ার
চন্দ্রহাস। শরীরে সহস্র ঝর্নার গান। মহাকাশ থেকে
মৃত্তিকা পর্যন্ত বিছিয়ে দিয়েছে শিল্পচাদর।
শ্বেতবর্ণ।
সুন্দরের কাছে প্রণত হলো মন।
শুদ্ধরাগে কে বাজায় ভৈরবীরাগ?
সব তুচ্ছতার উর্ধ্বে উঠে দেখছি সুন্দর, ঈশ্বরী ও
তুমি সমার্থক।
আমি কেউ নয়।
হয়তোবা বৃষ্টিশেষের বাতাস।
হয়তোবা পাখির পালকে লেগে থাকা গৈরিক
রোদ্দুর। হয়তোবা অক্ষরে অক্ষরে ঘুমিয়ে থাকা
কবিতার অনিঃশেষ শ্বাস।
হয়তোবা,হয়তোবা অন্যকিছু,অন্যরকম।
__________________
বৃষ্টি থেমে গেলে
বৃষ্টি থেমে গেলে বিদ্যুৎ কুড়োতে কুড়োতে আমরা
বাড়ি ফিরে যাবো।
আমাদের গার্হস্থ্যজীবন জুড়ে বৈপরীত্যের ছোট
ছোট টিলা।
কালো কালো কফিনে সুখের মৃতদেহ।
উঠোনে দাঁড়িয়ে শববাহী শকট।
বৃষ্টি থেমে গেলে বিদ্যুৎ কুড়োতে কুড়োতে আমরা
বাড়ি ফিরে যাবো।
দর্পণে দর্পণে ঝুঁকে পড়া মেঘ।
উঠোনে রাশি রাশি বিশ্বাস ভঙ্গের পাতা।
সম্পর্কহীন তেপান্তরের মাঠ পার হয়ে ঘরে
ঢুকছে আগন্তুক বাতাস।
বর্ণহীন ফ্যাকাশে বিছানায় ঘুমিয়ে
আছে স্বপ্নরা।
বৃষ্টি থেমে গেলে বিদ্যুৎ কুড়োতে কুড়োতে আমরা
বাড়ি ফিরে যাবো।
স্নান সেরে সুগন্ধি ওডিকোলন মেখে আমরা চর্চা
করবো পরশ্রীকাতরতা ও মূল্যবোধহীন জীবন।
কেবল ঘুমোতে যাওয়ার আগে বিদ্যুতের আলোয়
আমরা সনাক্ত করবো আমাদের মৃতদেহ।
___________
ঝড় শেষের স্নান
ধুলোমাখা চুল জানে অস্বস্তি ধুয়ে দেবে জল।
অতএব ধারাস্নান।
শ্যাম্পু না সমূদ্রফেনা, ফুটে আছে ব্রহ্মকমল,
নাব্য নদীবক্ষে ফুল্লরার বারমাস্যা,গমরঙ
নাভি থেকে উড়ে গেল অন্ধকারঅবাধ্য পাখি।
ঝড়ের গমকে ছিঁড়ে গেছে সুর। উড়ে গেছে
গান। ধাতব আচ্ছাদনে ঢাকা ছাদে দোলনায়
দোল খায় উড়ে আসা পাতা।
প্রেমিক সুজন জানে নম্রতার অন্য নাম প্রেম।
লিকার চায়ের কাপে স্মৃতিগুলো বর্নময় মাছ
হয়ে যায়।
গল্পরা জীবনের খোঁজে চিরপদাতিক। শব্দগ্রন্থি
থেকে খসে যায় নিরাকার উপমা, দেবীদহে
লালনের গান গায় বিব্রত সময়।
______________
অতঃপর
অতঃপর ফিরে আসে গৃহত্যাগী হওয়া।
সন্ন্যাসীবর্ণ দিগন্ত পূর্বাশ্রমের মতো বিহ্বল করে
কবির বিরল আসবাব,
দৃষ্টি,অনুভব ও সংবেদী উচ্চারণ।
বহমানকাল কাল্পনিক নদীর মতো শাখা
বিছিয়েছে শাদা পাতায়।
অক্ষর গুণে,উচ্চারণ মেপে,
কবি লিখছেন অন্ধকার জয়ের পংক্তি।
শ্রেষ্ঠরমণীকে নিবেদিত কবিতাগুলির
একটি সংকলন প্রকাশিত হবে আগামী
দেবীপক্ষ, মহালয়ার তর্পণপ্রত্যুষে।
দেবী, শ্রেষ্ঠরমণী ও ঈশ্বরী
অন্তর্লোক আলো করা রমণীর কল্পনাম।
অতঃপর শূন্যকে বৃত্ত ভেবে কবি
অখণ্ড পৃথিবীর কবিতাগুলির
ভূমিকায় লিখলেন,
জ্যোতির্ময় উপলব্ধির স্বীকারোক্তি।
_______________
স্বেচ্ছামৃত্যু
আদ্যন্ত বিচ্ছিন্ন করেছি নিজেকে,
শবানুগমনে মুষ্টিমেয় কজন।
পার্থিব বাতাস দক্ষিণের ঝুলবারান্দা থেকে উড়িয়ে
নিল শুকোতে দেওয়া রুমাল।
খই ছড়িয়ে যারা ঈশ্বরধ্বনি দিচ্ছে তারা কেউ
শোকার্ত নয়।
জীবন খরচ করতে করতে শেষ সম্বল মৃত্যু।
পড়ে আছে অভ্যাসের স্পর্শ পাওয়া পোশাক,
আসবাব আর সম্পর্ক।
পড়ে আছে সাফল্য ও ব্যর্থতার দীর্ঘ তালিকা,
পড়ে আছে আ্যসট্রের গর্ভে সিগাটের ছাই।
সমুদ্র ঢেউয়ের মতো মৃত্যুও একদিন ফিরিয়ে
দেয় মুছে যাওয়া সুখ, হাসি ও লঘু মুহূর্ত।
মৃত আমি কি স্মৃতিভূক পর্ণমোচী গাছ?
নিস্পত্র শরীরে হওয়াবাসর বানাতে চাইছে
অন্তিম ইচ্ছা,
অথচ স্মৃতিফলক ভেঙে চুরমার।
স্বেচ্ছামৃত্যুর পক্ষে দাঁড়িয়েও শিশিরের থেকেও
শীতল একবিন্দু জল গড়িয়ে পড়ল
ডান চোখের কোণে।
_______________
সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
প্রচ্ছদ - লিপি সেনগুপ্ত
ঠিকানা -সুরতপুর, দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১
কথা - 9434453614
খুব ভালো লাগলো
ReplyDelete