তপনজ্যােতি মাজির গুচ্ছ কবিতা
নৌবিদ্যা
স্রোতে ধুয়ে যাচ্ছে দুপাড়ের গর্ভবতী মাটি। ভাঙছে পাড়।নৌবিদ্যা আয়ত্ত করে দেখেছি ভাসমানতা এক ব্যতিক্রমী প্রকৃতি। তুমি জলঙ্গীর পাড়ে দাঁড়িয়ে ভাবছো এক লীলায়িত পুরুষের গৃহত্যাগ কতটা যথার্থ ছিল।
আমি ভাবছি নৌকার আবিষ্কারক নেদারল্যান্ডের কথা।
স্রোতের অভিমুখ কিংবা বিপরীত, নৌবিদ্যা কি
জীবনের কথা বলে? সমস্ত বিদ্যাই কি পরাভূত
জীবনের কাছে? আশ্চর্য সমীকরণ নিয়ে যেভাবে
টিকে থাকে দাম্পত্য, সেভাবেই নদীর সঙ্গ পেতে
নৌকার দর্শন প্রয়োগ করেছি জীবনে।
নদী ও নারী,পুরুষ ও পর্বত মৌলিকভাবে এক।
প্রাচীরের উচতায় প্রমাণ হয়না, দুর্গ সুরক্ষিত।
হিমশৈলের আঘাতে ডুবেছিল টাইটানিক। পরাস্ত
হয়েছিল নৌবিদ্যার প্রযুক্তি ও প্রকৌশল।
শুধু আবেগমথিত চুম্বন অতলান্তিক সমুদ্রবুকে
মৃত্যুকে তুড়ি দিয়ে উড়িয়ছিল ভালোবাসার বিজয় পতাকা।
____________________
নৃতত্ত্ব
বিবিধ সংলাপ ডুবে যাওয়া চাঁদের মতো জেগে
থাকে স্বচ্ছ জলের তলায়। জলের দর্শন বোঝে
পৃথিবীর কুমারী বুক। কোনও পর্যবেক্ষণ অভ্রান্ত
নয় জেনেও মৌলবাদ কুরে খায় চিন্তার প্রগতি।
নৃতত্ত্বের বিবর্তন ইতিহাস প্রসিদ্ধ মহাযুদ্ধ নয়। ধর্ম কি প্রাতিষ্ঠানিকতায় অধিক বিশ্বাসী? মৃত মানুষের
ফসিলে বঞ্চনার ভাষাহীন কাহিনী। মিশরীয় মমি
কি দৈহিক অনশ্বরবাদীদের রাজকীয় বিলাস?
দূর থেকে মনে হয় ব্যবধান এক অনতিক্রম্য পথ।
শত শত পূর্বপুরুষের করোটিতে বহমান প্রাণের কি
সংকেত খুঁজেছে মানুষ? অস্তিত্ব ও অনস্তিত্ব এক
দুরুহ গণিত। তোমার সান্নিধ্যে কাটিয়ে দিতে ইচ্ছা
হয় অগনিত সৌরকাল।
প্রান্তজনের জন্যে কোনও অক্ষর নেই ইতিহাসে। কি
ভয়ঙ্কর সভ্য অবহেলা! ভূগর্ভ কি মাতৃগর্ভের মতো
যত্নে বড়ো করে সম্ভাবনার বীজ? চলে গিয়েও কি
ফিরে আসতে হয় উৎসে? অন্তরঙ্গ মুহূর্তে মনে হলো
তুমিই ইভ, প্রথম মানবী।
______________________
নির্জন নারী
দহনবেলায় গর্ভবতী মেঘ ঘুমিয়েছিল তৃণের বিছানায়। জনশ্রুতি মোড়ের দোকানে লাল
চা খাচ্ছিল বিস্কুট ডুবিয়ে। বাড়ি বাড়ি ঘুরে
ইলেকট্রিক মিটারের রিডিং নিচ্ছিল মেঘরঙ
মেয়েটি। দোতলার ঘর থেকে গান পাখি হয়ে
উড়ে গেল সেগুন বাগান।
আবর্তন জানে সৌরসংসার। অবসাদ সরিয়ে
ছন্দে ফিরছে দুঃস্বপ্নের গ্রাম। স্টেশন পেরিয়ে
রাস্তা চলে গেছে যেন দূরগামী নদী। নিখোঁজ
বৃদ্ধ ফিরে আসছে ঘরে। স্বপ্ন ফেরি করেছিল
যে উন্মাদ তাঁর সঙ্গে দেখা হলে জেনে নেওয়া
যেত মৃত্যু ঠিক কতখানি শীতল। রাত বাড়ে জোয়ারের মতো। নির্জন নারী ও খেয়াঘাট জানে নৌকায় ঘুমিয়ে আছে ঈশ্বর।
__________________
উৎসে ফেরা
গ্রীবার নিচে গ্রীষ্ম অভিমানী,না দেখা দিনে ওলট
পালট হওয়া,মেসেজ বক্সে নীরব প্রতিশ্রুতি,বন্ধ
চোখে তুমিই ঈশ্বরী।
সমস্যমান পদের রেষারেষি,উড়ছে ধুলো বিপন্ন
কৌতুকে, অশ্বারোহীর দৃষ্টিপথে মেঘ, বৃষ্টি পড়ে
তোমার ভ্রুসন্ধিতে।
ঘরছাড়ারা ফিরছে গ্রামের পথে। মানুষ বোঝে
সহিষ্ণু রাজনীতি। ক্ষমার কাছে বিনীত প্রত্যাশী,
তোমার নিকট অপূরণীয় ঋণ।
উৎসে ফেরার নিষিদ্ধ তর্জনী,শিকড় জানে অলক্ষ্যে
সঞ্চার,ভূমির কাছে কৃষির সরল পাঠ, নির্বাচিত
অক্ষর ক্ষয়হীন।
ধরেছি হাত, ডেকেছি ডাকনামে, বন্যা ভাঙে অজয়
নদীর পাড়, তোমার কাছে চেয়েছি প্রশ্রয়, হৃদয়
বোঝে প্রেমের পদধ্বনি।
অলস খামে লিখেছি তোমার নাম। তিন অক্ষরে
তেপান্তরের মাঠ। শিথিল মুঠোয় নশ্বর সঞ্চয়,শরীর
জানে শরীর বাঙ্ময়।
________________________
পরিবেশ
প্রিয় ও অপরিবর্তনীয় যাকিছু, মহার্ঘ সংরক্ষণের
মতো গুছিয়ে রেখেছো। ভেবেছো বেলশেষের দিনে
উড়িয়ে দেবে হওয়ার গতিপথে।
ধুলো ও ধোঁয়ায় কমে যায় অক্সিজেন।
পরিবেশ ছাড়পত্র মিলে যায় অন্ধকার পথে।
বৃক্ষও জেনে গেছে নির্বাক জীবনকে
সহ্য করতে হয় প্রগতির অত্যাচার।
দূরতম মনে হয় মানুষের মন। আলো,অন্ধকার।
ম্যাকলস্কিগঞ্জ থেকে হেঁটে যাই অরণ্যের নিরভিমান মুগ্ধতার কাছে, ঝর্নার কাছে বসি। স্বগত বলি, নির্বাসিত অরণ্যের অধিকার।
মানুষের কাছে ঋণ। প্রকৃতির কাছে ঋণ। ঋণী
শুদ্ধ পরিবেশের কাছে। বৃষ্টি এলো ঝড়ের ডানায়।
আলো চলে গেলে অরণ্যের ছোঁয়া লাগে মফস্বল
জীবনে। পুকুরের জলে বিদ্যুৎ ধুয়ে নিচ্ছে মেঘ।
তোমার মেসেজ এলো স্মার্টফোনে। সৌর বার্তার
মতো গ্রহে উপগ্রহে। দূষণ মুক্ত হোক মন এবং পরিবেশ।
_____________________
সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
আলোচনা চিত্র- কোরাস
ঠিকানা -সুরতপুর, দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১
কথা - 9434453614
কবিতা গুলি পড়ে দীপ্ত হলাম। আরও লিখুন তপন জ্যোতি। তাঁর কবিতা পড়ে জ্যোতিষ্মান হয়ে উঠব, আমরা পাঠক।
ReplyDelete