Monday 20 June 2022

তপনজ্যোতি মাজি এর কবিতা // ই- কোরাস ৬১

 



তপনজ্যোতি মাজি এর গুচ্ছ কবিতা 

সাঁতার



রৌদ্রস্নান নাকি রোদসাঁতার? হৃদয় শুভেচ্ছাপাত্র,

অথচ উন্নাসিকতা নিষিদ্ধ ধোঁয়ার মতো গোলাকার উড়ছে হাওয়ায়। যতটা তেজষ্ক্রিয় ভাবো তার থেকে ঢের লঘু এই রোদ।

ঠিক যেন হলুদ রমণীর পায়ের রঞ্জিত নখ।


উষ্ণতার মাত্রা জানে জল। সমস্ত সাঁতার কেবলমাত্র

জলক্রীড়া নয়। রোদের গনগনে আঁচে দূরগামী বাস

যাচ্ছে বান্দোয়ান। কাঁধে শিশু বাইকে যাত্রী সম্ভ্রান্ত

রমণী। সমস্ত গমন আসলে সাঁতার।

শহরের রাস্তা চলে গেছে জঙ্গলের বুক চিরে আরও

কোনও দূরতম শহরের দিকে। অবিচল অনুপ্রেরণার মতো সৌরস্পর্শ। বাতাসকে কে মনে হয় কবিতার

উদ্ধৃতি অংশ কিংবা প্যারোলে মুক্তি পাওয়া কোনও

সাজাপ্রাপ্ত কয়েদী।

ভাঙো প্রথা। জীর্ণ ও পুরাতন মিথ। স্নানের তৃপ্তির

পর দর্পণ দর্শন। রোদের ভিতরে বৃষ্টির বীজ পুঁতে

দিচ্ছে রজস্বলা মেঘ। স্নান শুধু প্রতীকী প্রসাধন।

সব স্নান কি কেবল শরীরী?

________________


সাক্ষাৎকার


ভূগর্ভ জলস্তর কমে যাচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ

করেছেন পরিবেশবিদ। শাওয়ারের তলায় ভিজে

যাচ্ছে নগ্ন নারী দীর্ঘক্ষণ। ধুয়ে যাচ্ছে শ্রান্তি ও মনোভার।

যে কথা বলেছে পুরুষ, যে প্রশ্ন উদ্ভিদের মতো

জন্মেছে মস্তিষ্ক মাটিতে তাকে পল্লবিত হতে দাও

ভেবে,বেড়েছে রক্তচাপ,মনোজ সরোবরে প্রবল তোলপাড়।


দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে সে বলেছে,স্বাধীনতা ও সন্দেহ

পরস্পর বিরোধী। সে বলেছে, মন ও শরীর কিন্তু

প্রশ্নাতীত। সে ভেবেছে আসলে প্রভূত্ববোধ মানুষের

সহজাত প্রেষণা।


ভৌম জলের ভাণ্ডার একদিন হয়তোবা শেষ হয়ে

যাবে। শেষ হবে মানুষের প্রভুত্ব ও সন্দেহ অসুখ। একদিন কোনও এক সাক্ষাৎকারে মানুষ স্বীকার করবে বহমান রক্তের তারল্য ও মনের ভ্রান্তিগুলি সমধর্মী নয়।

___________________


স্বেদবিন্দু



ভ্রুক্ষেপহীন মুহূর্ত পার করে দাঁড়িয়েছো মধ্যবর্তী

শূণ্যতায়। স্বেদবিন্দুগুলি উপমাহীন। গ্রীষ্ম যেন

নির্বিকার পুরুষ। অঙ্গে অগ্নিমশাল। নীরব স্বর

মন বললো, বৃষ্টি ডেকে আনি।


স্বেদবিন্দুগুলি কাঁচের দেওয়ালে অভিমানী জল,

বিপন্নতা শিরোধার্য ভেবেছে নিষ্ক্রিয় রুমাল।

মেঘের দেওয়ালে দাবিপত্র লিখেছে গর্ভবতী

আষাঢ়। শুকনো নদীবুকে স্তন্যদানের স্মৃতি।


সন্ধার নিষ্প্রভ আলোয় মনে হলো পুরানো বান্ধবী।

ব্যস্ত কি ছিলে? মনে মনে মুছে দিই স্বেদবিন্দু।

প্রদক্ষিণ করি জলের গভীরে সক্রিয় ঘূর্ণি।

__________________



জামরুলগাছের ছায়া



যে ছায়া নিষিদ্ধ নয়,তাকে দিই মেধা ও অধ্যয়ন।

মৃগশিশু চরে বেড়ায় ধ্যানবিন্দুর ওপারে।

আরও দূরে মায়াবী বিকলে গড়িয়ে যায়।

ইউনিভার্সিটি পড়া মেয়েটি নিশ্চিত হয়,

একা থাকা শ্রেষ্ঠ স্বাধীনতা।


স্রোত নেই তমালের বুকে। আড়াবাড়ি জঙ্গলের

দীর্ঘ গাছেদের ছবি সরে সরে যাচ্ছে আয়নায়,

স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে, একটু স্লো করে পার হই

স্পীডব্রেকার। স্কুল ছুটির পর বাসস্ট্যান্ডে

দাঁড়িয়ে গার্লস স্কুলের দিদিমনিরা। আমাদের

গন্তব্য চন্দ্রকোনারোড।


ছায়া কি নস্টালজিক করে? পাড় ভাঙার শব্দে

নৌকা থাকে নির্বিকার। আমিও কি জলমাটি

মেখে পৌঁছেছি নিবিড় ছায়ায়! ভুলে যাচ্ছি নাম,

জন্মতারিখ, মোবাইল নাম্বার ও পাসওয়ার্ড।

জামরুলগাছের ছায়ায় দীর্ঘ হয় প্রাপ্তবয়স্ক বিস্মৃতি।

__________________


বিশ্বাস


স্থির জলে ছায়া,সদর্থক এই অবস্থান থেকে কেন

সরে যায় নিভে যাওয়া আগুনের মতো নৈর্ব্যক্তিক প্রতীতি?

রমণীর সিঁথির পাশে জমে আছে দাম্পত্যের দুর্গম

বিষাদ। অথচ নাব্যতা মেপে মাছেদের সাঁতার দেখি ক্লান্তিহীন।

শতরূপ শরীরের দেরাজে দেরাজে অন্য প্রস্তাবনা। 

কে আর অচঞ্চল মহাবোধি শাক্যপুত্রের মতো?

নিষ্কাম আগুনে পোড়ে রূপ।

ছাতার নিচে ছায়ার পরিসর ছোট। বৃক্ষের উদারতা

বিষয়ে সহমত মানুষ বলেছে, একদিন সমস্ত অস্ত্র

পরাজিত হবে ভালোবাসার কাছে।

পরিসর ঘিরে আছে পরিধি। দেওয়ালের উচ্চতা তুচ্ছ

হয়ে যায়। তোমার কাছে প্রণত বিশ্বাস। নোঙরে কি

আটকে আছে অস্তগামী চাঁদ?

সময়ের মান্দাসে দম্পতি মাত্রেই বেহুলা ও লখিন্দর।

বিশ্বাসের কাছে শিথিল হয় তরবারি। দাম্পত্যে নষ্ট

হয় প্রেম।

সম্পর্কের সেতুর উপর ঝুলে আছে অবাধ্য পৌরুষ।

স্ত্রী জানে কার্নিশে বেড়ে ওঠা বটগাছের উৎস বীজ।

বাকি সব অকিঞ্চিৎ মার্জিন।

______________



সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ - লিপি সেনগুপ্ত

ঠিকানা -সুরতপুর,  দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১

কথা - 9434453614





No comments:

Post a Comment

তৃষ্ণা বসাক এর কবিতা // ই-কোরাস ১৮০

  তৃষ্ণা বসাক এর কবিতা ১. মহানির্বাণ   চুন্দ, চুন্দ, এখনি এই শূকর মাংস মাটির গভীরে পুঁতে ফেলো, পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যে এই মাংস পরিপাক করতে প...