শ্রীতনু চৌধুরী এর "বসন্ত এনেছি রাই" সিরিজের কবিতা
বসন্ত কবিতা
মৃত্যুর মুখে ঝরে যেতে যেতে
এভাবে কে ফাগুন আনতে পারে?
ত্যাগমন্ত্র দীক্ষা দিয়ে গেল যারা
স্বস্তিবাচনের বাইরে তারা কেউ
দেখাতে পারেনি নূপুর।
আসলে ফিরে ফিরে আসার
নিশ্চিত ঠিকানা সে'ই দিতে পারে
অনিকেত ব্রহ্মর পাশে যার স্তব
প্রতিটি পাতার খণ্ডিত আত্মাকে
অনুভবে রাখে বলেই
সে পরমেশ্বর।
চলো রাধে
উলঙ্গ শরীর
দুগ্ধ শোধন করে
তারই শীর্ষে তুমি
উষ্ণীষ হও পরমেশ্বরী
সুধাগন্ধ বাতাস - এই বসন্তে দেখুক
বৃক্ষ ও পুষ্পর
দুরন্ত যুগল মিলন।
পাপড়ি
পরিভ্রমণ শেষে
নামিয়ে রাখি শূন্য ও স্তব
লক্ষ পরিক্রমার পর
সোনালী যোনি থেকে
বেরিয়ে আসে সদ্য ফোটা শিমুল
আয়ু ও মধ্যরেখা বরাবর
কয়েকটি পাপড়ি
তার হিরন্ময় বক্ষে সাজাতে গিয়ে দেখি
রাই গন্ধে ক্রমশ ভরে যাচ্ছে
ভুবন ডাঙার মাঠ।
রাধা
বুকের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকে
আবহমান নারী
পুবের ভোর কদম ডালে
ধরেছে আসাবরী।
আঁচলে তার পিয়াল শাখা
শরীর সদ্য কলি
ওষ্ঠ আদর বুলিয়ে দিলো
বসন্ত বুলবুলি।
ফুলের বনে জাগে ভ্রমর
মগ্ন সারি-শুক
বিছানা জুড়ে বাসর পাতা
ছড়ানো কিংশুক।
উড়িয়ে দিয়ে রাঙা আবির
শূন্য সাধন সাধা
ফাগুন রঙে রাঙাবো যাকে
সে'ই তো আমার রাধা।
বসন্ত কীর্তন
আমন্ত্রণ পত্র লেখা পালাশবন্ধু ভোর। বৃন্তপথে ঘন্টি বজায় পুরানো হরকরা। তেপান্তর আলপথে বসে আছে বিমূর্ত কিশোর। আরক্ত পালক সব উড়ে উড়ে হৃদয়-ঝুলে আছে শিমুলের ডালে। তবুও রুক্ষ শরীর কন্টক বেলার গণনা না জেনে দিয়ে যায় রুদালী প্রদর। আহত ক্রৌঞ্চ পিপাসা কাতর।শূন্য মাঠ।নীল খামে নীলের ঠিকানা খোঁজে গোলাপী গহবর।সময় সরণি ভেদে চলে গেছে বনপলাশি। হৃদি গচ্ছিত ডালে পঞ্চগুঁড়ির মেলা। অধিবাসে পাশে এসে বসো। বসন্ত কীর্তনে কুঞ্জ মাঝে বসে আছে গোঁসাই ঠাকুর।
বৃন্দাবনী সারঙ্গ
কত পাতা ঝরলে
একটি ফুল ফোটে
সে দহন জানে বলেই
ভোর থেকে বেহাগ ধরেছে বাঁশি
নিঃস্ব বৃন্তে ঝুলে থাকা
শিমুলের নিকট তাই
নতজানু হও সমকাল
তোমার আগমন শুনবে বলে
সমস্ত আভরণ হেলায় বিছিয়ে দিয়েছে যে
তার সাধন বৈরাগ্যর সামনে
খুলে রাখো রাজমুকুট
চেয়ে দেখো-
পলাশ বৈষ্ণবীর চোখ থেকে
গড়িয়ে পড়া প্রতিটি অশ্রুয়
কত বিরহ লেখা আছে
অনন্তে ভেসে আসছে সুর
বুঝে নাও,
মোহনচূড়ার অন্তরে
কত বেদনা থাকলে তবে
বেজে উঠে বৃন্দাবনী সারঙ্গ।
সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
ঠিকানা -সুরতপুর, দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১
কথা - 9434453614
No comments:
Post a Comment