Saturday 11 July 2020

e-কোরাস ৩৬ // সোমা পাল দাস এর কবিতা




সোমা পাল দাস এর কবিতা

মাটিরকন্যা।

এসো, জাদু আয়নার সামনে হও স্থির 
নরম পলি জমা মাটি, তোমার শরীর 
ওগো মৃণ্ময়ী,
তাকিয়ে দেখো, এ মিথ্যা মায়া -প্রাচীর ! 

জানো না কি?
পোষা মার্জার ও 
আঁচড়ায়
পেলে নরম 
জমিন! 

কাদের জন্য ছিল খোলা তোমার দোর?
ক্ষতবিক্ষত তুমি তাই এফোঁড় ওফোঁড়
ওগো মৃণ্ময়ী,
ভাঙো, ভাঙো এবার বৃথা স্বপ্ন ডোর।

এসো মেয়ে 
বসো একা 
চেয়ে দেখো
একা নদী
পতিতপাবনী!

ভালোবেসেছিলে? করেছো উজাড়?
ভেবোনা এ তোমার একার দায়ভার
ওগো মৃণ্ময়ী,
অভিমান ভেঙে হও শান্ত পাহাড়।

দেখো মেয়ে 
দেখো চেয়ে 
একা পথ 
সামনে
এগিয়ে যাওয়ার....

জাদু আয়না, জাদু আয়না বলোতো এবার
আর ঠিক কী কী আছে হারাবার! 
ওগো মৃণ্ময়ী
সময় এসেছে, বন্ধু-মুখোশ খসাবার।

তুমি মেয়ে 
একা নও 
মৃণ্ময়ী তুমি,
এবার
চিন্ময়ী হও।

এসো, জ্বালি আলো, মায়া, শোক ভুলি
ক্ষতে ক্ষত গেঁথে সাজাই বরণ ডালি
ওগো চিন্ময়ী
আলোর পুজোয় ঘুচে যাক চোরাবালি।
             ...................... 

সফর

সেদিনের বৃষ্টিতে ভেজা 
তোমার মনে পড়ে না 
অঘ্রাণের বৃষ্টির কথা 
কেউ মনে রাখে না...
শ্রাবণ তোমার সবটুকু 
ছেয়ে আছে বুঝি.....

এক ছাতার তলায় 
ঠিক আধা আধি 
ভিজে যাওয়া রাত,
তোমার মনে নেই জানি, 
তুমি এখন দামি গাড়িতে
এতো টুকু ভিজতে দাওনা শরীর। 

পশ্চিম আকাশে 
হঠাত মেঘের দাপটে, 
পশলা দুই বৃষ্টি
নেমেছিল সেই অঘ্রাণে,
তুমি ভিজেছিলে
আর ভিজেছিলাম আমি।

গাছহীন ফুটপাতে
তোমার ছোঁয়াতে 
আদরটুকু ছিল দামী 
এখন আধপোড়া
চাতক বিকেল জুড়ে
প্রেত ছায়া নামে।

হঠাত হঠাত ধূসর 
শহরের আকাশে 
মেঘ জমা অভিমান,
কোনে কোনে জমা 
জঞ্জাল উড়িয়ে দিতে
ঝড় ঘনিয়ে ওঠে। 

জানি একদিন 
চলে যেতে হয়,
ফুরিয়ে আসে সব
সিগারেটের মত করে ক্ষয়
তবু কোন কোন দিন
থেমে যেতে মন চায়।
           ..................

মনখারাপি গল্প

আকাশ জুড়ে বৃষ্টি নামুক
নামুক বুকে মেঘের শোক 
হাতে হাত জড়িয়ে থাক
আজ মনখারাপের গল্প হোক,

চোখের তলায় জমাট কালি
কন্সিলারে কমবে জানি
নাইবা পরলে মেকআপ খানি,
আজ চোখেরকালি কাজল হোক।

সময়গুলো বৃথাই গেছে
বৃথাই বিকোয় মূহুর্তরা 
শীতের বিড়াল আলসে ডিঙোয়
আজ বিচার হোক চুলচেরা।

অভিমান জমছে কোথাও
পুড়ছে ক্ষোভের নীলচে আঁচ
হঠাত যদি বৃষ্টি নামে 
গলুক মনের ধুসর ছাঁচ।

দোষের পর দোষ জমেছে
জমছে কথার নীলপাহাড়,
চুপরাতের দেওয়ালঘড়ি
টানছে একাই সময়ভার।

ধোঁয়া ওঠা কফির কাপ
আধচুমুকে পড়েই থাক,
নেভা আকাশ কমলা -লাল
আজ গল্পগুলো উড়ান পাক।
            ................ 

কাঠগোলাপ ও সে

ওই কাঠগোলাপের গাছটার নিচে
শেষবারের মত দেখা হয়ে ছিল।
এত হাসতে পারত ও,
সামনে বয়ে যাওয়া খিলখিলে নদী ও
লজ্জা পেত।
সেদিন একটু ও হাসি ছিল না ওর মুখে,
অগোছালো শিরশিরে হাওয়া
চুলের ফাঁকেফাঁকে খেলছিল
অজানায় তোলপাড় হচ্ছিল বুক
আর সাগরগাড় চোখে চেয়েছিল অপলক।

আমার মুখেও কথা সরছিল না
পাশেই বসে ছিলাম।
এত ইচ্ছে হচ্ছিল ওর
হাতটা ধরতে...
ধরিনি কুণ্ঠায়।
আজ বড় অনুশোচনা হয়।
কেবল ভারি মনযোগ দিয়ে
ওড়নায় গিট পাকাচ্ছিলাম,
ওই কাঠগোলাপ গাছটার নিচে বসে,
তারপর মেঘ জমা আকাশে ঝড় উঠল...

এলোমেলো ঝড়ে ভেসে যাচ্ছিল 
আমার এলোমেলো কথারা,
মুখর ছিলো তার
কেবলই নিরব হয়ে থাকারা
নদীজল, বনতল,
ঘাটসোহাগি ছায়া
পাকদণ্ডী  ঘুর্ণাবতের কায়া
জোনাকির আগুননেভা মায়া,
নিরব ছিল সবই
তারপরই মেঘ জমা আকাশে ঝড় উঠল.. 

সেই ঝড় থেমে গেছে কবেই।
জায়গার অভাবে ছাদেই
একটা কাঠগোলাপ চারা লাগিয়েছি,
এতো টবের গাছ না
ফুল হলে হয়!
তবু ঝাঝরি ভরে দুবেলা জল দিই
একটা দুটো পাতা ছাড়ে
হিমভেজা বাতাসে পাতারা নড়ে,
ফেলে আসা কাঠগোলাপের সুবাসে
তার শেষ কথাগুলি গুমরে ওঠে.....

এ জন্মে হল না,পরের জন্মে আমরা....
তারপর মেঘ জমা আকাশে ঝড় উঠল, 

কথাগুলি আর শেষ হয়নি।
         ................... 

কালিম্পং

নীল পাহাড়, সবুজ পাইন
ধুপছায়া,
রাতগুলো, ধোঁয়া ধোঁয়া
কথা মায়া।

ঘুমভাঙা, সূর্যটা
মোড়া সোনায়
জাগে তখন, একলা মন
কার ছোঁয়ায়!

শুধু ফাঁকি, দিচ্ছে পথ
কুয়াশায়...
মন তবু, বুক বাঁধে
কি আশায়।

গুটিসুটি, ঠান্ডারা
লেপের ওমে,
রূপকথা, পরীদের
যায় থেমে।

শোক শহর, মৃত্যুবীজ
থাকে জমে
শ্রাবণ মেঘ, বুকচিরে
আসে নেমে।

ফুরায় রাত, ফুরায় দিন
সুর কাটে,
ঘরছাড়া, একতারা
পথ হাঁটে।
           ..................


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
তুলিতে - কবির নিজস্ব আঁকা
ঠিকানা - সুরতপুর, হরিরামপুর, দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর,পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১
কথা - 9434453614


4 comments:

  1. দুটো কবিতা ভালো লাগলো। প্রথম ও শেষ

    ReplyDelete
  2. সব কবিতাই ভাল লেগেছে। তবে বিশেষ করে মনখারাপির গল্পে কবিতাতে ছন্দ ও মাত্রা প্রয়োগের মুন্সিয়ানা লক্ষ‍্য করা গেল। কবিকে অসংখ্য ধন‍্যবাদ

    ReplyDelete
  3. অপূর্ব কিছু কবিতা পড়লাম। অভিনন্দন অনেক।

    ReplyDelete

তৃষ্ণা বসাক এর কবিতা // ই-কোরাস ১৮০

  তৃষ্ণা বসাক এর কবিতা ১. মহানির্বাণ   চুন্দ, চুন্দ, এখনি এই শূকর মাংস মাটির গভীরে পুঁতে ফেলো, পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যে এই মাংস পরিপাক করতে প...