Sunday, 29 September 2024

প্রতিবাদী সুর - অঞ্জন দাস // ই-কোরাস ১৯৭

 


বাঁচার দায় নেই মরার ও কোন দায় নেই। বুনো ওল আর বাঘা তেঁতুলের যেটুকু সম্পর্ক; সমান সমান

অঞ্জন দাস


১॥

বারান্দা খুললেই পৃথিবী প্রস্তুতি

 কানে ও কবিতা ঝোলে ছবি শব্দ হয়

 বিনিময় প্রথা ভেঙে কে লিখেছে নদী

 তুমি আছো আমি আছি তুলে  নেবো জয়


২॥

বৃষ্টি তুমি আসতে পারো এসেই দ্যাখো 

জল চেয়েছি ডালের ফুলে পাতার ভেতর

রংপরি রোজ রোদকথাদের অবিশ্বাসে 

মেঘের গল্প জমিয়ে ছিলো নদীর ভেতর


ওপর ওপর অনেক দিনই বুঝিয়ে ছিলে 

সেই যখনই নামতে হবে নেমেই দ্যাখো

মনের মনে যা ক্ষোভ আছে উগরে দিও 

বিপর্যয়ী নেমেই দ্যাখো নেমেই দ্যাখো


৩॥

হাঁসলে তুমি চুপ কথাদের স্তর সরে যায়

 ডাল গাছেদের পাতার টুপি ফুল পরে না 

নীল বাতাসে কোন সুরভী চোখ টেনেছে

 জেগে ওঠার ভুল কি তেমন ঠিক ছিল না


৪॥

জানালায় মুখশুদ্ধি ভেঙে পড়ে গাছের বাতাস

 সন্ধ্যাখুলে জলগান ঈশ্বরী গায় 

পলায়ন কবিতা কাঁচের চুড়িতে 

শব্দ এলে প্রতিবার পদ্য শোনায়


৫॥

গান থেকে তুলে আনো বুকের কড়াই 

কিছুটা ভাজতে হবে মন খুলে আনো 

বাগানের তাল ভেঙে আনন্দ ওড়াও 

নিয়ে এসো গন্ধ তার মুগ্ধ পিয়ানো


৬॥

লেখ্ক যত আবীর ওঠায়

 বনের শাখায় কবির চোখ 

চশমা বিহীন মিষ্টি শহর 

হাঁটছে দেখো তোমার লোক


৭॥

কাননে এসেছি প্রিয় ভুলে যাই পথ 

জীবনের মায়ারথ গ্রাস করে মোহ 

ডানা দিও শিষ দিও দিও জ্ঞান রথ 

ধুলো পাহাড়ের নিচে রাখি বিদ্রোহ


৮॥

তিলোত্তমা পুকুরে বোয়ালের কান্না শোনো বঙ্গ লিলিপুট 

যাঁতার দাঁতে ঝোলে ষোলো লাখ বাঙালি ঘাতক 

পরাশ্রয়ী সাঁতারে কলমের পান্না সেকি কাদা চিরকুট 

হাইকোর্ট কানা শিখে কুমিরের প্রকৃত যাতক


৯॥

কাক ভোরে কোকিলের ডাক,

ফুলের চাদর পাতা বকুলের তলা

দুপুরের ভাটিয়ালি শঙ্খ চিলের ছায়া, 

রং করা রাজবাড়ী

তার মাথায় ঘন নীল ছিঁড়ে যাওয়া ঘুড়ি

 তার চেয়েও সুন্দর সুন্দর তুমি


১০॥

স্বভাবে তেমন ভারতীয় মনে হয় না

তেল চিটে চুলে শ্যাম্পু লাগাতে হবে

বিড়ালের চোখে ঝুলে আছে সব বায়না

সারা দেশটাকে কবে যেন লটকাবে


১১॥

বটচুলে দোল খায় শৈশব নিঃশ্বাস

চাঁদ মুখে দুধে চড়া চিকচিক মাটি

নিম ফলে জ্বলে যায় নক্ষত্র বিশ্বাস

সেদিনের নুয়ে পড়া চোখ ছিল খাঁটি


১২॥

কাহারা অর্থ চাও আমি চাই অনর্থ কিছু

তোমরা রাজ্য নাও লক্ষী নাও 

ব্রহ্মচারী শব্দ দাও কিছু


১৩॥

আকাশ মানে স্থির জেনেছ শূন্যতাকে

আমার চোখে মেঘ করেছে বৃষ্টি হবে

তোমার পায়ে নুপুর হয়ে বাঁচতে পারি

সরস্বতী আলো দিয়ো চক্ষুটাকে


১৪॥

ঝাউয়ের পাতায় কখন তুমি কেমন এলে

মধ্যদিনে তারার খোঁজে হাসির রতন

আমি যখন একলা ঘরের উতল পাখি

চতুর্দিকে ছড়িয়ে থাকো ব্রহ্মকেতন


১৫॥

রং ছবিতে কুঁড়ির ভেতর ফুল আঁকোনি 

গানের ভেতর মন লেখোনি গায়ক পাখি 

ভাত পড়েছি খিদের ভেতর রাত পড়িনি 

রং ছবিতে কুঁড়ির ভেতর ফুল আকোনি



সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪

Sunday, 22 September 2024

শিরোনাম ঘাটাল // পাপিয়া ভট্টাচার্য // ই-কোরাস ১৯৬

 



শিরোনাম ঘাটাল : পাপিয়া ভট্টাচার্য 

কত বছর ধরে ঠিক জানি না,তবে আমাদের জন্মের আগে থেকেই বাবা জানত মাস্টার প্ল্যান হবে।জ্ঞান হওয়া অবধি আমিও প্রতি বড় বন্যায় শুনে এসেছি মাস্টার প্ল্যানের দ্রুত রূপায়ণের গল্প,আমার ছেলেও শুনে যাচ্ছে। তারপর তো অবস্থা এই! 

  পড়ে গিয়ে আমার হাঁটু কনুইতে  চোট ,তিনদিনের অবিশ্রান্ত বৃষ্টি, হঠাৎ বাবা মার বাড়িতে এসে আটকে পড়েছিলাম। মা বাবা হীন শূন্য বাড়িতে থাকতে কষ্ট হয়, কিন্ত প্রবল বৃষ্টির মধ্যে এবাড়ির কেয়ারটেকার মেয়েটির যত্নে সংসারিক দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়ে বিশ্রাম পাচ্ছিলাম বলে ভালো লাগছিল। 

 একটানা অঝোরে টানা বৃষ্টির পর বন্যা আসছে, বলতে না বলতেই রাতারাতি প্রবল জলস্রোতে ভেসে গেল সব। সে এমনই অবস্থা ,বাড়ি থেকে বেরোনোর উপায় রইল না,ফেরার কথা তো ভাবাই যায় না।

আমাদের বাড়ির অবস্থান এ তল্লাটে সবচেয়ে সুবিধেজনক উঁচু স্থানে । মাস্টারমশায়ের বাড়িও এবার ডুবছে ,এটা এখনও জলের ভয়াবহতা বোঝানোর জন্যে ব্যবহার করছে পাশাপাশি মানুষেরা, এবারেও দেখলাম। ফলে এবাড়িতে যখন সারারাত ধরে জল ঢুকতে শুরু করল, বুঝলাম কী ভয়ংকর পরিস্থিতি হতে চলেছে ! কয়েক ঘন্টার মধ্যে পুকুর চাতাল বাগান সব একে একে ডুবে বাড়িতে জল থই থই। উঠোন ভর্তি জল থেকে উঠে আসছে সাপ ব্যাং , অজস্র বিশাল বিশাল কেঁচো, বড় বড় কাঁকড়া শামুক , রাজ্যের পোকা মাকড়। কারেন্ট নেই,নেট নেই, টিভি নেই, নেটওয়ার্ক অবধি নেই যে ফোনে কাউকে যোগাযোগ করব !  তখন আর জি কর কান্ড নিয়ে উদ্বেগ বহুদূর, বাড়ির কৌলিক পুজোটি কিভাবে নির্বিঘ্নে হবে তাও ভুলে গেছি, সোমবার রাত্রি থেকে শুক্রবারের দুপুর সম্পূর্ন বিচ্ছিন্ন অবস্থায় চারদিক জলে ঘেরা নির্জন দ্বীপে বাস! জলের কলকল শব্দ আর সাপের উঁকি ঝুকি ছাড়া আর কিছু নেই। সাংঘাতিক অভিজ্ঞতা ! আর হ্যাঁ, ছাদে ছানাপোনা নিয়ে কটা হনুমান  আশ্রয় নিয়েছিল বটে ! আমাদের বাগানের যত পেয়ারা, এখন অন্য ফল আর কিছু নেই, শেষ করে করুণ মুখে তাকিয়ে থাকত খিদের জ্বালায়। বাড়িতে থাকার মধ্যে কিছু আলু পেঁয়াজ ডিম। তাও ওই ভরা স্রোতের মধ্যে অনেক ঝুকি নিয়ে সাঁতার কেটে বাবা মার স্নেহের সাহায্যকারী ছেলেগুলি  দিয়ে গেছল বলে। তারই কিছু আলু  ও বেচারিদের সঙ্গে ভাগ করেই খেতে হচ্ছিল দুদিন।

 এখন তাও ইনভার্টার এর আলো আছে,এইটুকু ভরসা। 

শীলাবতীর ওপারে এই বিভীষিকা এত তীব্র নয়, এপার প্রতিবছরই কম বেশি মার খেয়ে চলেছে। সারারাত জলের কলকল শব্দ শুনতে শুনতে মনে পড়ছিল তখনকার অন্ধকার সময়। একতলা ডুবে যাওয়া ,বন্যায় ঘর পড়ে যাওয়া আশ্রিত মানুষগুলির জন্যে ঘুটঘুটে অন্ধকারে হ্যারিকেনের সামান্য আলোয় বেঞ্চের ওপর তোলা উনুনে মা সবার জন্য খিচুড়ি রান্না করছে,শুকনো কাপড় চোপড়ের ব্যবস্থায় বাবা । তখন বাবার পুকুরভর্তি মাছ ,লকলকে সতেজ মাঠের পর মাঠ ভর্তি ধান, যা সেসময়ের সাধারণ একজন শিক্ষকের আয়ের প্রধান উৎস ,গ্রামের সবারই প্রধান আয়ের পথ,সব ভেসে গিয়ে মানসিক চাপে দিশেহারা বাবা। আমরা ভাইবোন ,আশ্রয় নেওয়া লোকজন কুঁকড়ে বসে আছি। মাঝে মাঝে দূরে কাছে শাঁখ বাজছে, ঝুপ করে কোন বাড়ির একতলা ভেঙ্গে পড়ল। এখনো যদি কোথাও একটা বাঁধ না ভাঙে, নিশ্চিত মৃত্যু। শেষ অবধি অবশ্য একটা বাঁধ ভাঙ্গতই অতিরিক্ত জলের চাপ সহ্য করতে না পেরে, ওপারের মানুষ বিপদে পড়বে জেনেও সেই ভাঙ্গন আশীর্বাদ হয়ে আসত আমাদের কাছে।

বহুবছর আর এখানে থাকি না এসময়। কিন্তু থাকি আর না থাকি ,মায়ের আকস্মিক চলে যাওয়ার আগে অবধি এরকম হঠাৎ করে সব ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া বন্যা আসার খবরে ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকতাম। এ ভয়ংকর জলস্রোত এমনভাবেই আসে,মুহূর্তমাত্র সময় দেয় না। সোমবারের রাত্রি থেকে শুক্রবার পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন জনমানবহীন অবস্থায় ঘরে বাইরে শুধু জলের শব্দ শুনতে শুনতে আত্ংকের মধ্যেও  ভেবেছি 2015 র সেই হঠাৎ আসা বন্যার কথা। বাবা তখন ডিমেনশিয়ার শেষ পর্যায়ে,আর কমাস পরেই চলে যাবে আমাদের ছেড়ে। হঠাৎ রাতারাতি সব ডুবে বাড়িতে জল। মাস্টারমশায়ের বাড়িতে জল ওঠা মানেই গোটা গ্রাম ডুবেছে, জানা কথাই। বাবার দুটি সাহায্যকারী ছেলে আর বাড়ির কাজে মায়ের সাহায্যকারী মেয়েটির বাড়িও। কেউ আসতে পারে নি তিনদিন। আমার শান্ত নিরুপায় মা প্রায় অচেতন মানুষটিকে নিয়ে দোতলাতেও উঠতে পারেনি। কিভাবে একা রুগী বাড়ি সব সামলেছিল মা ,ভেবে ভেতরটা কাঁপে এখনও! আমি কাছেই ঘাটালে ছিলাম,কিন্তু শীলাবতীর ওপারে । যেখানে শীলাবতী নদীর বাঁধ না ভাঙ্গা অবধি লোকজন  ফুঁসে ওঠা ও উপচে পড়া নদীর দুইপাড়ের সংযোগ রক্ষাকারী একমাত্র হেরিটেজ ভাসা ব্রিজের নৌকোগুলি খুলে ভাসিয়ে দেওয়া, বাঁধন মুক্ত হয়ে প্রবল স্রোতে সেগুলির দ্রুত মোহনার দিকে ছুটে যাওয়া, নদীপাড়ের ওপারের বাঁধে বস্তার পর বালির বস্তা চাপিয়ে শীলাবতীর ওপারে ঢুকে পড়া থেকে কোনোভাবে আটকানোর চেষ্টা ,এপারের ডুবন্ত ঘরবাড়ি বাজার দোকান....এসব দলে দলে দেখতে বেরোয় নিরাপদ দূরত্ব থেকে। ওপার আর এপারের চিরকালের এই পার্থক্য!

 অবশ্য কয়েক বছর ছাড়াই এখন ওপারও ডোবে। তখন মিডিয়ার দৌড়াদৌড়ি, বিশাল লেখালেখি ,টিভির খবর ,হেলিকপ্টারের আনাগোনা। কারণ এপারে ব্যবসা বাণিজ্য দোকান বাজার ,গ্রামের পর গ্রাম ,তুলনায় ওপারের শহরটি অনেক সমৃদ্ধ। এস ডিওর বাংলো থেকে সমস্ত ব্যাংক, অফিস ,ট্রেজারি সবই ওপারে। ওরা আলো বেশি পাবেই।

 সব পচে ওঠা এপারে তখন জল কমে যাওয়ার সাময়িক স্বস্তি। নিজেদের দুর্দশা ভুলে মহা উৎসাহে এপারের লোক তখন নদীর ওপারে ভিড় করছে বন্যার দহে হেলে পড়া বিশাল বাড়ির ছাদ থেকে হেলিকপটারের উদ্ধার করার দৃশ্য দেখার জন্যে। কত দশক ধরে এইভাবে চলছে 🥲🥲। সম্ভবত চলতেই থাকবে।

বি: দ্র:-  প্রতিবছরের এই প্রলয়ংকরী বন্যা থেকে ঝড়, আমফান আয়লা ফণি ইত্যাদি সমস্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানেই সরকারী বেসরকারী কেন্দ্র রাজ্য থেকে পর্যাপ্ত পরিমানে অর্থ ,প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, নতুন গৃহ নির্মাণের টাকা ইত্যাদি নানা ভাবে প্রচুর ত্রাণ আসবে, যার ছিটেফোঁটা পৌঁছবে প্রকৃত প্রাপকদের কাছে ! যেমন ত্রাণের দু আড়াইশো ত্রিপল এলে দলের বাইরে জনা পনেরো কুড়ি ,এই হিসেবে অন্য বিশাল অনুদান গুলির  জিনিসপত্রের ভাগ সহজেই অনুমেয়। বাকি সব উন্নয়ন !রাস্তার মোড়ে মোড়ে যা দাঁড়িয়ে আছে!( হায় ! শিকড় হইতে  কান্ড ,শাখা প্রশাখা হইতে পত্র পুষ্প শিরা উপশিরাগুলিতেও  পচন ধরিয়া গিয়াছে !)

 শুধু রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম এরকম কিছু প্রতিষ্ঠান , ব্যক্তিগত স্তরেও কিছু জন, সব তো জানি না আমি ,ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, তাঁদের কাছে দলাদলি পক্ষাপক্ষ নেই,সবাই সমান। এই পোস্ট পড়ে আমার অনেক চেনা মানুষ, যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এসবে সমর্থন করে ও জড়িত, তারাও আমার ওপর ক্ষুব্ধ এবং বিরূপ হবে জানি। কিন্তু এভাবে প্রিয় থাকার ইচ্ছে আমার কোনোদিনই কারো কাছেই ছিল না, নেইও। তাই আমার অতি ক্ষুদ্র সাধ্যমত যেকোনো দুর্নীতির প্রতিবাদ করে গেছি প্রথম থেকেই। আজও যদি না বলি, তাহলে আমার আদ্যন্ত সৎ ও লড়াকু কংগ্রেসী বাবার মেয়ে  হয়ে আমি নিজের কাছেই একদম ছোট হয়ে যাব। লিখতে গিয়ে  তাই বাবা ছাড়া আর কারোর মুখই ভাবছি না। কড়াইয়ের মত এই অঞ্চলে বন্যা চিরদিনই ছিল ,অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয় তো

 থাকবেই। স্বল্প না বেশি পরিমাণ জানি না ,তবে কেন্দ্র রাজ্য থেকে ত্রাণ তখনও আসত । বাবা দাদুরা তখন পঞ্চায়েতের মাথা ছিল।( তখন পঞ্চায়েতের প্রধানরা শিক্ষক গোত্রের হত, মোটামুটি শিক্ষিত লোকজন থাকত। এখন তো শুনি নিরক্ষর, অর্ধ নিরক্ষর দের প্রধান নামক  সম্মানিত পদটি দেওয়া হয় , তাঁদের কাজ শুধু যেখানে বলবে সেখানে চোখ বন্ধ করে সই করে দেওয়া।)  যাই হোক ,সেই ত্রাণের শেষ জিনিসটি পর্যন্ত দলমত নির্বিশেষে প্রকৃত দাবিদার মানুষের কাছে পৌঁছে না দেওয়া অবধি  সমস্ত ত্রাণসামগ্রী নিরাপদ পাহারায় রাখার কারণে বাবারা উৎকণ্ঠিত থাকত। এবং উদ্বৃত্ত কিছু আর নিজেদের সম্বল দিয়ে ভেঙ্গে পড়া বাড়ির দুর্গত মানুষের জন্য লঙ্গরখানাও খুলত কিছুদিনের জন্য। প্রসঙ্গত, আমরা বন্ধুরা সেখানেই প্রথম ট্যারা বাঁকা করে রুটি বেলতে শিখেছিলাম, বাবাদের স্বেচ্ছাশ্রম শেখানোর প্রয়াসে। সেসময়ের মানুষদের মনে বোধহয় দেশোদ্ধার,সমাজের উপকার ইত্যাদি ইত্যাদি কিছু মূল্যবোধে বিশ্বাস ছিল তখনও ,মানে নির্বোধ ছিল আর কি ! ফলে স্বীয় স্বীয় উন্নয়নে মনোনিবেশ করে নাই।

এবার আসন্ন মাস্টার প্ল্যানের কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে মাত্র গোটা কয় কথা বাকি।  শুরু এবার হতে পারে !হতেই পারে! তবে সেই বিশাল অংকের অর্থের কতখানি জনগণহিতায়  লাগবে আর কতটাই বা অন্য সব মহৎ কাজে , সেটাই কোটি টাকার প্রশ্ন ( এখন লাখ লাখের মত তুচ্ছ সংখ্যা কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না,সবই এসে কোটিতে ঠেকেছে)!

পুনশ্চ: - এবারের বন্যা এতোই ভয়ংকর হয়েছিল যে কোথাও একটা বাঁধ ভাঙ্গার মধুর খবরের ( এপারের মানুষের কাছে ) অপেক্ষায় শুকনো মুখে সকলে আকুল হয়ে প্রহর গুণছিল। একে একে বামনখানা,কাঁসাই, শীলাবতীর বাঁধ ভাঙ্গছে আর আমরা বিন্দুমাত্র তাদের দুর্গতির কথা না ভেবে নিজেদের উদ্ধারের কথা ভাবছি !  এই দীনতা ক্ষমা করো প্রভু ! এরকম দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে আমাদের হাতে আর বিকল্প কী-ই বা থাকতে পারে !


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

ছবি - পাপিয়া ভট্টাচার্য

কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪

Saturday, 14 September 2024

প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর // ই-কোরাস ১৯৫

 



১.

উত্তর 

অঞ্জন দাস


থৈ থৈ জলের শহর

 রাজপথে চন্দ্রিমা ভেসে গেল

 নাগরিক পাদুকায় শুকিয়ে যাচ্ছে তার সব অহংকার

মেঘ কালো মেঘ, ঘন হচ্ছে প্রতিবেশী 

ধরা পড়ছে ডাকাতের দল-


ও ডাক্তার ও ডাক্তার

ছিন্নমস্তা আর মগজের শয়তান 

উপড়ে দিলে, পায়ের তলাতে খেলে

সুপ্রীম ভয় ! তুমি জয়, নির্মল ভোরের বেহালা


সারথি ইঙ্গিত, বাকি শুধু অশ্বথামা রাবনের মৃত্যু

উত্তরায়ণের পথে বিশ্ব , মহামারী ধুয়ে দিও ডাক্তার

রাজ্যে পড়েছে শীত ক্রমশ ঠান্ডা হচ্ছে নবান্নের গলি

অর্জুন মাকে ডাকো আর একটু জল দিও ভীষ্মের মুখে

বোধনের ধ্বনি ধ্বংসাবশেষে 

 মুক্ত হবে বিশ্বের চোখ

অতি সাধারণ শান্তি চেয়েছে শুধু দৈনিক যাপনে

কেমন লাগবে বলো ডাক্তার।


২.

আগুনখাতার পৃষ্ঠা থেকে ৬

শ্রীজিৎ জানা


এখনই আমাকে ফিরতে বোলো না উৎসবে। 

সবেমাত্র মেয়েটাকে দাহ করে ফিরেছি!

একটু সামলে নিতে দাও নিজেদের।

আত্মজর লাশ পোড়া গন্ধ গায়ে মেখে 

এখনই কী ফেরা যায় উৎসবে?


সন্তান জন্ম দেওয়ার মতো আর কোন বড় উৎসব হতে পারে না মা-বাবার কাছে। 

সন্তান হারানোর মতো আর কোন বড় শোক

হতে পারে না মা-বাবার কাছে। 

কী বীভৎস যন্ত্রণা দিয়ে ওরা মেরেছে মেয়েটাকে! 

কত না চিৎকার করেছে মেয়েটা! 

উৎসবের উল্লাসে ঢেকে দিও না কান্নার স্বর।

 ওর কান্না জাগিয়ে রাখুক উৎসবের সমস্ত রাত!

বিচারের শেষ রায় শোনা অব্দি

জেগে থাকতে চায়ছে সবার চেতনা।

অন্য কোন নির্লজ্জ আহ্লাদের কাছে 

সঁপে দিতে চায়ছে না যূথবদ্ধ পণ।


মন থেকে এতটুকু রাগ কমেনি এখনো!

এতটুকু জিঘাংসা!

এখনই ফিরতে বোলো না উৎসবে।

সন্তানের খুনিদের লাশ চিহ্নিত করে তারপর

সাড়া দেব তোমার আমন্ত্রণে।

সদর্পে ফিরবো উৎসবে!

এখনই নয়…


৩.

হে সর্বংসহা

শ্রীতনু চৌধুরী


সেই পলাশ নিংড়ানো রাতে 

তার হৃদযন্ত্র মাপক 

মাটির বুকে বসিয়ে 

মেয়েটি শেষবার হয়তো 

শুনতে চেয়েছিল 

তোমার প্রাণ স্পন্দন 


শ্বাপদ সংবাদ শেষে 

তার বিভগ্ন মাতৃচিহ্ন সম্মুখ 

মৃত পড়ে আছে দেখি 

সভ‍্যতার বীভৎস লাশ 


থামো সর্বংসহা,

প্রয়োজন নেই আর পরিক্রমার

লুন্ঠিত শব থেকে স্ব-হস্তে

টুকরো টুকরো করে কেটে 

যোনি ও স্তন 

তুলে দাও -

নিজেরই আদিম সরীসৃপ

সন্তানের হাতে ।



৪.

হাতে নিয়ে প্রাণ

আভা সরকার মণ্ডল 


কতকাল আর --      চোখে নিয়ে জল 

দেখে যাওয়া শুধু --  ক্ষমতার বল ?

সময় এসেছে --       উঠে দাঁড়ানোর 

এককের দিকে --    হাত বাড়ানোর ।


দুইয়ে দুইয়ে চার --- চারে চারে আট 

মিলে-ঝিলে গড়ে ---তুলি রাজপাট ।

জুলুমের সাথে ----- করতে লড়াই 

এখন তো আর ---   কেউ না ডরাই ।


পা মিলিয়ে পায়ে --- হাতে রেখে হাত 

সামলিয়ে চলি----- ‌ ঘাত প্রতিঘাত ।

জয় পরাজয় ----    একা কারও নয় 

প্রতিবাদী হতে ---   নেই তাই ভয় ।


মুছে ফেলে কালো ---জ্বালাব-ই আলো 

গুটি হাতে তুমি------ যত চাল-ই চালো ।

উলটিয়ে যাবে------  সে পাশার দান

দেখবে তা তুমি ----- হাতে নিয়ে প্রাণ!



৫.

কে যেন বলেছিলেন জ্ঞানের মশাল জ্বলুক

লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল

   

যদি সাদা কথায় রোধী এবং বিরোধীর তফাৎ বুঝতে চাই 

তবে আঁচল থেকে খরগোশটি লাফ দিয়ে বেরিয়ে পড়ে, দৌড়ে যায় জনগন পেরিয়ে, বন জঙ্গল খুঁজতে খুঁজতে লুকিয়ে পড়ে ঝোপের মধ্যে, জ্ঞানী শেয়ালেরা বংশ বাড়ায় প্রহরে প্রহরে 

তখন জ্ঞান-বিজ্ঞান ছবি-গান-কবিতা সবেতেই অধিকার সাম্রাজ্ঞীর 


তবু যেখানে সেখানে কথায় কথায় আসেন স্তালিন লেলিন গান্ধী, এমন কি এসে পড়েন  হিটলার, নিজস্ব সেনার মৃতদেহ দিয়ে খাদ ভরিয়ে এসে পড়েন নেপোলিয়ানও 


রাস্তা কী খুঁজিয়া পাইয়াছেন হে ধ্বংসবাদ, রাস্তা কী তৈরি করিতে পারিয়াছেন হে নাৎসিবাদ 


তবে কি আমরা লির (বেহালা) বাজাবো না নিরোর মতন, 

তবে কি আমরা উৎসবের মার্কেটিং করবো না সিন্ডিকেট কমিশনের জন্য 


যতই ধর্ষণ করে খুন করো অথবা খুন করে ধর্ষণ 

না পারলে মাতৃজঠরে ইনজেক্ট করো ১৫০ মিলিগ্রাম ফ্লুইড 


মশাল জ্বলছে, আকাশ ছুঁয়েছে 


জ্ঞান হে, তোমার প্রুফরিডিং থেকে অজ্ঞান শব্দটি মুছে দাও 



৬.

আন খুঁজে আন শিরদাঁড়াটা

 জয়শ্রী সরকার 


শিরদাঁড়াটাই নেই যে রে তোর, কোথায় ফেলে এলি?

মানুষ তোকে বলবে না কেউ এটাই ভুলে গেলি!

এ্যাদ্দিন তো সুখেই ছিলিস উন্নত মস্তকে 

কোন্ ড্যারাতে গিয়েছিলিস? ধরলো যে ভূত তোকে!


শিরদাঁড়াটা খুঁজে পেলে মুক্তি পাবি ওরে 

গোলামগিরি করতে করতে থাকবি ঘুমের ঘোরে !

লোভ-লালসায় থাকতে থাকতে হয় যে মাথা নত 

শিরদাঁড়াটাও বাঁকতে থাকে পরজীবীর মতো!


শিরদাঁড়াহীন মানুষগুলোর স্বরযন্ত্রই অচল 

সত্যি বলবে কেমন করে? চলবে থেকে সচল।

কোথায় রে তোর মায়ের স্নেহ, বাবার ভালোবাসা 

আন খুঁজে আন শিরদাঁড়াটা, পাবি সুখের বাসা!


সুখের বাসা সত্যি খাসা, ছোট্ট সোনামণি 

তোর মাঝেতেই খুঁজে পাবে হীরে মাণিক খনি। 

তোর চোখেতে চশমা রঙিন, খোল তো রে আজ আগে 

দেখতে পাবি চোখের পাতায় শিরদাঁড়াটাই জাগে!



৭.

ওরা

ইতি মণ্ডল 


সূর্যের আঁতুড় ঘরে ওদের জন্ম।

একদিকে সরস্বতী অন্যদিকে 

বিবেকানন্দ, ক্ষুদিরাম…

গলায় মুহুর্মুহু স্টেথোর স্পন্দন।

দুহাতে কলিজার নয়া ইতিহাস। 

নিদ্রাহীন যাপন ওদের কুঁদে কুঁদে ইস্পাত করেছে।

ওরা গান্ডীব কাঁধে অর্জুন,

একটাই লক্ষ্য...

তুমি না, তোমার গভীর গহ্বরের শোধন...

ওরা পার্থসারথি, ধর্মের  রাশ টেনে।

আত্মজর আর্তনাদে আমরাও সারি সারি সমরে।

পূর্ণিমার চাঁদ ও আজ বর্ণহারা-টকটকে।

হাজার হাজার চোখের ভিতর ভিসুভিয়াস।

তুমিও তো একদিন জীবন ভিক্ষা পাত্র নিয়ে দাঁড়াবে ওদের দ্বারে, ভুলোনা...।

ওরাই গড়বে মাওলাইনং, বিশ্বখানা...

ওরাই টাঙাবে আগামী ইতিহাসে, সত্যের সামিয়ানা!



৮.

লখিন্দর গন্ধ 

খুকু ভূঞ্যা 


মৃতদেহ নিয়ে তুমি সারাদিন নাড়াচাড়া করো 

আমি মৃত্যুর ভেতর কিছুটা বেঁচে থাকি নিজের মত 

এখন বেঁচে থাকার সুখ কাউকে দেওয়া যাবে না 

সে যতই শ্বাসকষ্ট হোক দহন হোক 

নিজের ক্ষতগুলো অলৌকিক হয়ে উঠুক একা একা 


অনেক দিন থেকেই মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে 

হৃদয়ের ফল্গুতটে মৃত ঢেউ নিয়ে সে কেবল প্রতীক্ষা করেছে নিজস্ব উজান 

আমাদের পড়শী কামনা বালি থেকে আরো বালি হয়ে যায় 


খুব একা হয়ে গেছি, নিবিড় শ্মশান 

পাঁজরে লখিন্দর গন্ধ

বুকে কেউ আগুন জ্বালে না

মৃত্যুর প্রতিধ্বনি ফিরে ফিরে আসে প্রতিদিনের জন্মের ভেতর 


এবার সূর্য গলে যাক টুপটুপ 

তুমি বাধা দিও না হে আমার প্রিয় প্রশ্বাস 

...........................



সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ (সংগৃহীত ফেসবুক) - দেবাদীপ ঘোষ

কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪


অমৃত মাইতি এর গদ্য // ই-কোরাস ১০৮

  আমি এক নদী অমৃত মাইতি আমি এক আঁকাবাঁকা নদী। জন্মের পর থেকেই শুধু বাধা বাধা আর  বাধা। বাধার পাহাড় বেরিয়ে আমি কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছি মোহনার ...