১.
অসুখ ১
তৃষ্ণা বসাক
অনেক বছর পর আবার একটা ঠান্ডা ঘর,
বিটাডিনে ধোয়া লম্বা করিডর,
লিফট থমকে যায় সেখানে এসে, একদম শেষ প্রান্তে
কড়ির বাটি ভর্তি ডাল ভাত, ওপরে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল
আমার দিকে এগিয়ে আসে লম্বা লম্বা ছায়া ফেলে,
ভাতের প্রতিটি দানার ছায়া পড়ে আমার শরীরে,
শ্রোণিদেশে সহসা সুঁই ফুঁড়ে
চলচ্ছক্তিহীন করে দেওয়া হয়…
এ ঘরে জানলা আছে, জানলায় বসার জন্যে আমি নেই,
জানলা খোলাও হয় না অনেকদিন,
শুধু ঠান্ডা মেশিনের মিস্টি ঘুর ঘুর আওয়াজ
আমাকে জাগিয়ে রাখে,
আচ্ছন্ন যেমন জাগে, সেরকম উসুম কুসুম জাগরণে
আমি ভাবি আজ তো কেউ আসবে,
এই আরোগ্যনিকেতন তো শহরের বাইরে নয়,
ফুটপাথে এত ফুলের পসরা,
আজ তো কেউ আসবে…
ঠিক তখনি কি তাকে ওরা গুঁড়িয়ে দিচ্ছিল?
ভোরের ব্রাহ্ম মুহূর্তে,
এত মিলি সিমেন-
ভিকি ডোনার কি দিতে পেরেছে এক জীবনে?
ফার্টিলিটি ক্লিনিকের বাইরে ভিড় করা এই শহরের পুরুষেরা-
এত বীর্য তোমরা কোথা থেকে পেলে-
ভাবতে ভাবতে আমি ঘুমিয়ে পড়ি,
আবার জাগি,
আমার এখন কোন রাত্রি নেই, আমার এখন কোন দিন নেই।
২.
কন্ডোম কবিকে লেখা
বিশ্বজিৎ বাউনা
ঝলসে উঠেছে চোখ? লিখে দিলে সেই যোনিপথ
গলি রাস্তার ফালি কেটে উগ্র লিঙ্গেরই মহিমা!
মাংসের কাদা ভেঙে কিভাবে ছোটে কামেরই রথ...
এঁকে দিলে সর্বগ্রাসী নারী-চেরা? যার নেই সীমা!
তবে কি যোনি পূজ্য নয় আর? ধর্ষণে তার পাঠ
তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করে নেবো লেখা জুড়ে?
জানি প্লুত সেই বোধের অক্ষরে ভরে গেছে মাঠ,
কালান্তক পাখি মরে গেছে, শিকারী প্রকোপে পুড়ে।
আজ দিকে দিকে সতেজ সব মাংসের কারবারী।
ক্ষমতাগ্রাসী বলদের হুঙ্কারে থিতু মেঘ জল...
লিঙ্গের সন্ত্রাস ছিঁড়ে দিতে পথে নেমে এসো নারী,
তীব্র চন্ডার মতো আজ তুমি নিজে হও প্রবল।
কন্ডোম কবির মতো চেপে ধরে আছে সময়েরা।
বুঝিয়ে দাও-হে নারী, তুমি শুধু নও যোনি-চেরা।
৩.
দশভূজা ও তিন নম্বর চোখ
মৌপর্ণা মুখোপাধ্যায়
আরও আটটা হাত
তুমি ফেলে এসেছ উৎসস্থলে
মনে রেখো
অসুরবেষ্টিত চারদিকে
নিরাপত্তা শব্দটিতে ধুলো জমে গেছে;
দশভূজা হতে হবে তোমাকে।
দুই হাত দিয়ে
তুমি কলমের আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলো পদ্মফুল
স্টেথোস্কোপে শুনে নিতে পারো স্পন্দনকথা
পরম মমতায় কোলে তুলে নাও সদ্যজাতকে
স্নেহমাখা স্পর্শে মুমূর্ষু সন্ধান পায় ভোরের আলোর।
ছত্রিশ ঘন্টা কর্তব্যের পর যখন
ক্লান্তি এসে ছুঁয়েছিল দুই চোখের পাতা
তখনই জাগ্রত হবার প্রয়োজন ছিল
তিন নম্বর চোখ ও বাকি আটটা হাতের।
নেকড়ে হায়নাদের জন্য শুধু দুটি হাত যথেষ্ট নয়।
সভ্যতা ফিরে গেছে প্রস্তরযুগে;
ত্রিশূল ,খড়গ ও অন্যান্য হাতিয়ার নিয়ে
এবার সময় হয়েছে দশভূজা হবার।
৪.
আগুন খাতার পৃষ্ঠা থেকে -৩
শ্রীজিৎ জানা
তোমার স্বর
আমার স্বর
বলতে চায়
আর জি কর
তোমার ঘর
আমার ঘর
রুখতে চায়
আর জি কর
আর জি কর
গাছ পাথার
মাঠ পাহাড়
চায় বিচার
গর্জে স্বর
আর জি কর
আর জি কর।
মা বাবার
কোল খালি
বুক খালি
দাও সাড়া
গ্রাম শহর
আর জি কর।
শ্লোগানে
ময়দানে
ক্যানভাসে
রাজপথে
উঠুক ঝড়
আর জি কর।
আজ যদি
চুপ থাকো
মুখ ফেরাও
অন্ধকার!
আজ যদি
চোখ রাঙায়
ভয় দেখায়
ছিছিক্কার!
পা বাড়াও
পা বাড়াও
হও সরব
চাই বিচার
ধর্ষিতার
জাগতে চাই
গ্রাম শহর
রাত প্রহর
আর জি কর
আর জি কর!
৫.
দেবীপক্ষ ২
দুঃখানন্দ মণ্ডল
তুমি দেবী, তোমার পাশে বসি।
তুমি নারী, তোমাকে শ্রদ্ধা করি তোমার অজানতে।
তুমি প্রশ্ন করেছিলে ঐশ্বরিক শক্তি নিয়ে,
উত্তরে বলেছিলাম তুমি নারী, তুমি দেবী।
প্রদীপ জ্বলছে। উচ্চারিত হচ্ছে মন্ত্র
তোমার মন্ত্র। বিশ্লেষণের পর রয়ে যায় অনুচ্ছেদ।
তুমি নারী। ক্ষমতা তোমার হাতের নাগালে;
শ্রদ্ধাশীলতা। তুমি এখনো আটপৌরেই থেকে গেছো।
তুমি নারী : তুমি দেবী
আসলে তোমারই পুজো হয় দেবী রূপে…
সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪
No comments:
Post a Comment