Sunday, 11 August 2024

প্রতিবাদের ভাষা // ই-কোরাস ১৯০

 


১.

কো-এডুকেশন 

তৃষ্ণা বসাক 


মুখে পুরুষাঙ্গ ঠুসে 

যারা আমাদের বছরের পর বছর ধরে 

স্বরাঘাত কৌশল শিখিয়ে এসেছে, 

শিখিয়েছে কীভাবে কবিতা কিংবা গবেষণাপত্র লিখতে হয়, 

চালাতে হয় দপ্তর অথবা বিমান, 

কীভাবে আলোকিত মঞ্চে এসে বিনম্র ভঙ্গিতে দাঁড়াতে হয়, 

কিংবা হাঁটতে হয় মিছিলে, 

মুখে পুরুষাঙ্গ ঠুসে মেঝেতে চিৎ করে ফেলে 

যারা আমাদের ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাস থেকে 

সম্মোহন -সমস্তটা শেখাতে চেয়েছে,

ভেবে দেখো, 

তোমরাই ভেবে দেখো, 

ওদের কাছ থেকে আরো কিছু শেখার বাকি থেকে গেল, 

নাকি তোমরাও কিছু শেখাবে এবার?



২.

আমি তোমাদের মা বলছি

মূল ওড়িআ কবিতা: এলি মহান্তি

বাংলা অনুবাদ : প্রদীপ কুমার রায়     



আমার অন্তর্বাস ধরে খেলতে থাকা সন্তানগণ 

আমি তোমাদের মা বলছি --


আমার একটুও লজ্জা 

আমার অন্তর্বাসে ছেড়ে আসিনি 

যার প্রদর্শনে 

লজ্জিত হবে আমার সন্তানগণ অথবা 

তরঙ্গায়িত হবে আমার দেশের মান 

নির্লজ্জতার অট্টহাসিতে ।


এখন 

তোমরা সবাই যথেষ্ট পরিণত  

ওগুলোকে হাতে নিয়ে নৃত্য করার বদলে 

একবার ওগুলো পরে নিও 

দেখবে তোমাদের বুকে লাগবে তোমাদেরই ঠোঁটের রস

সেই রস আমার স্তনের থেকে ধুয়ে ফেলিনি আমি 

তোমাদের জন্ম থেকে।


নৃত্য বন্ধ করতে পারবে যদি 

মায়ের অন্তর্বাস পরে কিছুক্ষণ দাঁড়াও 

তোমাদের ছোট্ট ছোট্ট হাত পা বেরিয়ে আসার সংঘর্ষে 

সেথায় রক্তের দাগ থাকবে, দেখো ।


আমি চাইনি 

 আমার সন্তানগণ পৌরুষত্বহীন হোক 

আমি চাইনা মাতৃত্বের অপমানে একটি দেশ 

চুরমার হয়ে যাক তার যুবক সন্তানগণের সাথে 


তবে এইটুকুই সত্য যে 

আমার অন্তর্বাসে আমি একটুও লজ্জা ছেড়ে আসিনি 

যাকে নিয়ে তোমরা আরম্ভ করতে পারবে ব্যাবসা 

অন্যান্য অনেক মুলুকের সাথে  ।



৩.

চেতনা : শূন্য 

সুনীল মাজি


কার যে কখন ঘড়ি অচল হয়ে যাবে? কার বাগানের ফুলপুষ্প কখন যে চুরি যাবে!

কবে থেকে ছিঁচকে চোরগুলো এত বড় বড় বর্দী পরে ডাকাত হলো?

সবকিছুই রঙসম্ভব ! সব প্রেম রঙের জাদু! 

বুঝলে চাঁদু 

জাদুঘরে শূন্য পেলেও তুমি বিকলাঙ্গ শরীরে জয় করতে পারো ম্যারাথন।  

কেননা তোমার দৌড়ানোর দরকার নেই। তোমার বদলে রেসের গাড়ি আছে।

রথচক্রে অষ্ট্রাবক্র এই বেশ আছ খেলা শুরুর আগেই তুমি পুরস্কৃত। 

অতএব মিথ্যা বলো। 

অতএব বলো যে, এখানে কোনও কীট পতঙ্গ আরশোলা ইঁদুর নেই

বলো কীটনাশকের প্রয়োজন নেই 

বলো আকাশে শকুন চিল বাদুর ও চামচিকি নেই

বলো আধুনিক সভ্যতার স্বর্ণযুগে মানুষ সততার প্রতীক 

বলো মানুষের নিঃশ্বাসে কোনও ধোঁয়া নেই 

বলো মানুষ পলিথিন পলিমার সিলিকন গুঁড়ো কী জানে না 

অথবা কিছু না বলে শূন্য থাকো 

মা বাবার শূন্য কোলে একটি করে পুতুল দাও !

বলো, কেউ ধর্ষিত হয়নি—যা দেখছেন ওটা সেক্স-ডল!

নব্য-বণিকের দেশে তবে কি দাসপ্রথা চালু হলো আবার!


৪.

আগুন-খাতার পৃষ্ঠা থেকে

শ্রীজিৎ জানা 


যদি চুপ থাকো তবে মরে গ্যাছো।

যদি চোখ থেকে না ঝরে এক ফোঁটা জল

তবে মরে গ্যাছো।

যদি ফাঁকা পড়ে থাকে রাজপথ,

যদি শ্লোগানে ভাঙাতে না পারো ঘুম,

যদি বিধাতার পায়ে মাথা রেখে

অপেক্ষা করো বিচারের –তবে মরে গ্যাছো।


যদি দরজা খুলে বেরোতে না পারো আজ,

যদি মুড়ি বাতাসার লোভে সেজে থাকো

অন্ধ, বধির!

অন্যের কোল খালি হোলো ভেবে,

দুপুরের ভাত ঘুমে যদি ঢলে পড়ো!

তবে মরে গ্যাছো।


তোমার সন্তানের লাশ কুড়োবার আগে

একবার বেঁচে ওঠো।

একবার।


৫.

চক্রব্যূহ

ইতি মণ্ডল 


ভূমিষ্ঠ হবার আগে থেকেই যুদ্ধের গল্প শুনে চলেছে  ভাবী ভবিষ্যৎ 

অস্ত্রে শান দিতে দিতে ধরা আলোকিত করে আগামী...

ভিক্টোরিয়ার সবুজ গালিচায় অপেক্ষারত কামনা-বাসনা

ময়দান থেকে গঙ্গার বুক চিরে হুস হুস করে মেট্রোয় চলেছে লালসা

স্বপ্নগুলো  ড্রাগ ,গাঁজা, সিগারেটে চিপকো হয়ে সংশোধনাগারে বুক ফাটা হাহাকার, কে আছো? আছো কেউ ? বাঁচাও!

না হয় রক্তাক্ত নিথর দেহ কনভয়ে, কে আছো? শুনতে পাচ্ছো ? ফিরিয়ে দাও!

পাশে মুখোশ ঢাকা মিছিল-বিচার চাই! বিচার চাই!

আমরা তোমায় ভুলছি না, ভুলবো না...

নিশুত রাতে মুখোশ বিহীন অশরীরী ফিসফিস করে বলেই চলে 

বেরোনোর পথ না শুনে জন্ম নিলে কেনো? আগামী ভবিষ্যৎ তুমি চক্রব্যূহে বন্দী। 

পথ চেনো, কোনির মত লড়াই! লড়াই!

ভেঙে দাও! ভেঙে দাও! ঐ লৌহ কপাট...

..........................



সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪

No comments:

Post a Comment

অমৃত মাইতি এর গদ্য // ই-কোরাস ১০৮

  আমি এক নদী অমৃত মাইতি আমি এক আঁকাবাঁকা নদী। জন্মের পর থেকেই শুধু বাধা বাধা আর  বাধা। বাধার পাহাড় বেরিয়ে আমি কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছি মোহনার ...