Sunday, 23 June 2024

মহুয়া ব্যানার্জী এর কবিতা // ই-কোরাস ১৮৩


 

পুরনো অ্যালবাম

মহুয়া ব্যানার্জী 


১.

পুরনো অ্যালবামে স্মৃতির রূপরেখা,

পাড়া বেড়ানো সময়গুলো মধ্যভাগে 

বিলুপ্তপ্রায় চড়ুইয়ের মত বিক্ষিপ্ত ওড়াউড়ি করে,

দুরবর্তী স্টেশনে ট্রেন ছেড়ে গেলে চাকার 

শব্দটুকু হারিয়ে ফেলার ব্যথা বয়ে আনে!

অচেনা হতে হতে হঠাৎ করে আবার 

কি পরিচিত গণ্ডিতে ফিরে আসা যায়না? 



২.

পুরনো অ্যালবাম ঠিক যেন প্রাচীন 

শরিকি বাড়িটি, প্রতিটি সময়ের গল্প

ধরে রেখেছে পাতায় পাতায়।

শীর্ণ ঠাকুমার শেমিজ থেকে 

 ঝুলে পড়া শুষ্ক স্তনের ছবিতে 

তার দীর্ঘ লড়াইয়ের গল্প লেখা হয়।

নববধূ বরণের ছবিটিতে পেছনের পর্দার 

মধ্যবিত্ত দৈন্য নজর কাড়ে,

 বধূটির উজ্জ্বল মুখ একদিন ওই পর্দার 

মতই ফ্যাকাসে হতে হতে মা ঠাকুমার 

ছবির মত অপ্রস্তুত হবে ! 

আত্মীয়স্বজন বড়ছেলের বন্ধু আশ্রিতা পিসির মত কেউ পাড়া প্রতিবেশী সব 

নিয়ে পুরনো অ্যালবাম ভরে থাকে,

ভরে রাখে একাকীত্বের ফাঁক। 

চাঁদের মত দাগছোপ নিয়েও আকর্ষণের  কেন্দ্রে 

থাকে সব পুরনো অ্যালবাম। 



৩.

পুরনো অ্যালবামে জলপড়া দাগ,

মিছিলের স্মৃতি সব ঝড়ের আকাশে 

অমলিন উদ্ধত থাক। 

সাদাকালো ছবি অচেনার ভীড়,

বেপরোয়া রোয়াকের উত্তাল গল্পরা

পাতায় পাতায় স্থির।

লাল স্কার্ট ফুলছাপ দু'বিনুনি ঘিরে 

সাইকেল দ্রুতগতি টিউশনির রাস্তায় 

আসবে কি ফিরে? 



৪.

সেই কবে তাজমহল দেখেছিলাম, 

তার চেয়েও মুগ্ধ বিস্ময়ে দেখেছি

বাবার বন্ধুর পেনট্যাক্স ক্যামেরা।

চটপট সবাইকে দাঁড় করিয়ে 

ছবি তুলছিল কাকু, আমাকে ডাকেনি।

আমি হ্যাংলার মত তাকিয়ে ছিলাম।

তাজমহলের দিকে নয়

যাদের ছবি তুলছিল তাদের দিকে! 

কালো মেয়ের সাদাকালো ছবি খুব 

কি খারাপ হয়? কে জানে।

বছর মাস দিন গড়ালে আবার তাজমহলের সামনে একা দাঁড়িয়ে।

চকচকে মুখে বাবা ছবি তুলছে একটার পর একটা, মেয়েটা খুব ছবি তুলতে ভালোবাসে। 

পুরনো অ্যালবামে সেই সব ছবিগুলো ভীষণ রঙিন এত বছর পরেও। 



৫.

প্রথম পাতায় বিয়ের ছবি দুটোয় হাত বোলায় যুবতী, মঙ্গলসূত্র আর সিঁদুরে 

নিজেকে এত অপরূপ লাগছে...

পরের পাতাগুলোয় সুখী সংসারের 

রঙবেরঙের চিত্রপট উপছে পড়া 

সুখের গল্পগুলো বলছে...

শেষ পাতাটা এখনও ফাঁকা!

যুবতীর বেরঙীন শাড়ি, ফাঁকা সিঁথি 

আর খুলে রাখা মঙ্গলসুত্রের গল্প 

বলার ছবিটা একটু পরেই  

জায়গা পাবে। 

ইলেকট্রিক চুল্লীতে ভালোবাসার লাশ

পুড়তে যতক্ষণ, 

তারপর এই পুরনো অ্যালবাম যুবতীর 

একমাত্র আশ্রয় হবে।

                   ……………….  



সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ ভাবনা - অভিষেক নন্দী

কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪

2 comments:

অমৃত মাইতি এর গদ্য // ই-কোরাস ১০৮

  আমি এক নদী অমৃত মাইতি আমি এক আঁকাবাঁকা নদী। জন্মের পর থেকেই শুধু বাধা বাধা আর  বাধা। বাধার পাহাড় বেরিয়ে আমি কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছি মোহনার ...