Thursday 15 February 2024

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বন্ধ সিনেমাহলের কথা // ই-কোরাস ১৫


 

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বন্ধ সিনেমাহলের কথা ১৫

রূপালী টকিজ – খুকুড়দহ, দাসপুর

শ্রীজিৎ জানা


শিরোনামে একটা সিনেমাহলের নাম লেখা কিন্তু এর আগে বিস্তর কথা আছে। আসলে একের ভিতর বহুর ভীড়। তাহলে একটু খোলসা করে বলা যাক। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রান্তভাগে খুকুড়দহ গ্রোমের অবস্খান। দুর্বাচটি খালের উত্তর অংশ পশ্চিম আর দক্ষিণ অংশ পূর্ব মেদিনীপুর জেলাভূক্ত। এমন ভৌগলিক কাটাকাটি হল ২০০০ সালে, যেই মেদিনীপুর জেলাকে দুভাগ করা হল। তা ওই খুকুড়দহ গ্রামের বুক চিরে ছুটে গেছে রাজ্য সড়ক। ওই সড়কের পাশেই গড়ে ওঠে প্রথম সিনেমা হল 'চন্ডী টকিজ'। সময়টা প্রকা স্বাধীনতার দশক। গাঁয়ের জাগ্রত দেবী চন্ডীর নামে নামকরণ করা হল। প্রতিষ্ঠিাতা স্বনামধন্য ব্যাক্তি অমরেন্দ্রনাথ ভূঞ্যা। যাঁর বদান্যতায় ওই গ্রামে উচ্চ বিদ্যালয়, হাসপাতালের মতো অনেরক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। টালির ছাউনি আর ঝিটেবেড়ার দেওয়াল দিয়ে তৈরি হয় প্রেক্ষাগৃহ। পর্দার সামনে খেজুরপাতার চাটাই পেতে দর্শকরা বসতেন। তারপর বাঁশের বাতার মাচা করে বসার ব্যাবস্থা ছিল। থার্ড ক্লাসের দর্শনি ছিল দু'আনা,সেরকেন্ডে পাঁচ আনা আর ফার্স্ট ক্লাসের জন্য ছিল আট আনা। শম্ভু টকিজ কিছুদিন চলার পর বন্ধ হয়ে যায়। পরে বৃন্দাবনচক ( পূর্ব মেদিনীপুর) গ্রামের জনৈক ব্যাক্তি লিজে নেন ওই প্রেক্ষাগৃহ। তিনি নাম রাখলেন কমলা টকিজ। কিন্তু তাও বেশিদিন চলল না। সেই সময় ওই সিনেমাহলকেই নতুন রূপ দিয়ে গড়ে উঠল সরকারি প্রতিষ্ঠান।  দাসপুর ২ ব়ক অফিস রানীচক থেকে চলে এল বন্ধ সিনেমাহলে। এক্ষেত্রেও অমরেন্দ্র নাথ বাবুর ভূমিকাই ছিল অগ্রগন্য। যদিও চল্লিশ বছর পর ব্লক অফিস সোনাখালি গ্রামে স্থানান্তরিত হয়।


এরপর খুকুড়দহ গ্রামে গড়ে ওঠে আরেকটি সিনেমাহল 'নারায়ণী সিনেমা'।  খুকুিড়দহ গ্রামের গণেশ প্রামাণিক এবং তাঁর বন্ধু ব্রজেন সামন্ত যৌথভাবে এই প্রেক্ষাগৃহ চালু করেন। পাকার দেয়াল আর টালির ছাউনি দেওয়া হলে রমরমিয়ে শুরু হয় ছবিপ্রদর্শন। এবার খেজুরপাতার চাটাই ও তক্তা দিয়ে উঁচুতে বসার ব্যবস্থা ছিল। নারায়নীর দর্শনী ছিল ঊনিশ ও বাষট্টি পয়সা। তিনটা এবং ছ'টার শো হত। 'তরনী সেন বথ' ছিল এই হলের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং দীর্ঘদিন চলা সিনেমা। কিন্তু ছয়- আট বছর চলার পর হল বন্ধ হয়ে যায়। তবে নচরায়নী সিনেমাহলের একটি বিশেষ দিক হল,প্রত্যেক শো শেষে ছবি সমাপ্তির পরেই জাতীয় সঙ্গীত বাজত। দর্শরা উঠে দাঁড়িয়ে সেই সুরে গলা মেলাতেন। নারায়নী বন্ধ হলে   ওই সিনেমাহল অনিল মাজী নামের জনৈক ব্যাক্তি লিজে নিয়ে হল শুরু করলেন। নাম রাখলেন 'নমিতা টকিজ'। কিন্তু তার আয়ুও বেশি দিন রইল না।


ক্রমেই খুকুড়দহ একটি জনবহুল গঞ্জ রূপে গড়ে উঠেছে।  সেখানে সিনেমাহল বন্ধ থাকা প্রশ্নই ওঠে না। হলও তাই। উক্ত গ্রামের রাধানাথ ভূঞ্যা  নিজস্ব জায়গায় গড়ে তোলেন 'রূপালি টকিজ'। আনুমানিবক ১৯৭৯ সাল নাগাদ রূপালি সিনেমাহলের জয়যাত্রা শুরু হয়। কংক্রিটের সুদৃশ্য প্রেক্ষাগৃহে আসন সংখ্যা ছিল চারশ। কোন ব্যডালকনি ছিল না। রূপালি সিনেমাহলে বেশি দিন চলা সিনেমা 'ববি'। প্রায় চারমাশ চলেছিল। 'হাতি মেরে সাথী' ছমাস,'শত্রু' আট মাস ব্যাপী চলে। 'শোলে' ছবিও দীর্ঘদিন চলেছিল রূপালীতে। তবে শুরুর দিকে উত্তম- সুচিত্রা জুটির বিখ্যাত সিনেমাগুলি এই হলে রমরমিয়ে চলত বলে জানান সোমনাথ ভূঞ্যা মহাশয়।  শো টাইম ছিল তিনটা এবং ছটা।পোস্টারের মাধ্যমেই ছবির প্রচার চলত। ক্রমে হলে এসে  সিনেমা দেখার ঝোঁক কমতে থাকে দর্শকদের মধ্যে। রূপালিতেও ভিড় কমতে থাকে। অবশেষে ১৯৯৩ সাল নাগাদ রূপালি প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হয়ে যায়।


তথ্যসূত্র :–

১. শ্রী বরুণ চক্রবর্তী - সম্পাদক, বর্ণদীপ পত্রিকা,খুকুড়দহ।

২. শ্রী গণেশ প্রামাণিক, খুকুড়দহ।

৩. শ্রী সোমনাথ ভূঞ্যা,খুকুড়দহ।

৪. শ্রী দ্বিজেন্দ্র নাথ ভূঞ্যা, খুকুড়দহ।

...................................


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪

No comments:

Post a Comment

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বন্ধ সিনেমাহলের কথা // ই-কোরাস ২০

  পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বন্ধ সিনেমাহলের কথা ২০ রূপছায়া টকিজ – বালিচক শ্রীজিৎ জানা সিনেমাহলে প্রবেশের আগে, এক প্রস্থ অন্য কথা হোক। আরে মশাই!...