গুরুপদ মুখোপাধ্যায় এর কবিতা
শূন্যতা
কাল ছিল গতকাল
কাল জমা আছে ভবিষ্যৎ
বর্তমানের সাঁকো পেরিয়ে
চলে যাচ্ছে তারা।
অথচ বর্তমান ঘরবন্দী
জানালার সিক ধরে
এক চিলতে আকাশের দিকে তাকিয়ে
শূন্যতা মাপছে আজ।
দেখছে আকাশ; নক্ষত্রমন্ডলী
সব থরে থরে সাজানো
শুধু ভেঙে যাচ্ছে বর্তমান
অনন্ত জোনাকি ভিড়ে অতল শূন্যতা।
কোন মাপ মানে বা উত্তর নেই এ শূন্যতার।
…………………..........
প্রতিবিম্ব
দর্পন নিজের চোখ দেখেনা
প্রতিবিম্ব দেখে।
চোখ নিজের চোখ দেখেনা
প্রতিবিম্ব দেখে।
অথচ হাজার হাজার চোখ ভিড় করে
দর্পনের সামনে; প্রতিবিম্ব হাসে।
প্রতিবিম্বের আড়ালে চোখের কাজল
মরুর উষ্ণ উষ্ণীষ হয়ে স্নান সারে।
মৃত্যুর মত গহীন গভীর ; তার ভিতর
লুকিয়ে একটা আস্ত সমুদ্র।
মেরুভেদী কবোষ্ণ প্রপাত ছড়িয়ে দেয়
হিমের সংসার ; আড়ালে সমান্তরাল।
সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসে যে পরিযায়ী ;
উড়ে যায় সংসার নিয়ে অজানায়।
চোখ পড়ে নেয় কথার
টুকরো বিন্দুগুলি; শীতঝরা বিকেল
কখন যেন ভেঙে ফেলে চোখের টাইটানিক;
ধেয়ে আসে শরীর; শব্দজাত নদী।
ভোরের উষ্ণতা নিয়ে
ছড়াপাট সারে তুলসীতলার বেদী।
…………………..
মায়াবেড়া
যে জিজীবিষা নিয়ে ঘর বাঁধি
তা আসলে বাঁশ বাজির খেল
পুতুল নাচের মতো শুধু রংবাহার
শয়তান ও ভগবানের সহবস্থানে
থিতিয়ে পড়ে যে ফেনা
তা তুলে আনি জল থেকে।
চেয়ে থাকে চোখের কাজল
ছন্দের তলে তলে লুকিয়ে
ছন্দ ভাঙার গল্প; ভালোবাসা কতটুকু?
শরীরের আতসবাজির রংমশাল
জেগে থাকে পেঁচা; নিশাচর রাত
বিছানার মুঠোগুলি আলগা হয়ে যায়।
এ এক অপূর্ব! ঈশ্বর!
মায়াবেড়ার শিকলের দ্বীপ
শুয়ে থাকে পাথর; মাঝে অনন্ত ক্রোশ
আক্রোশে ভেঙে ফেলি খেলাঘর;
লতার গয়নাগুলি; শিলাই এর জলে
নুয়ে পড়া বাঁশগাছের চুম্বনরেখা!
শঙ্করাচার্য!
এ শান্ত গভীর সমুদ্রের ছন্দের ঢেউ
আসুন্তার আঙুর বাগান
কোথায় লুকোব এ উষ্ণতা!
শীতল পরিধি ছুঁয়ে থাকে ব্যাসার্ধ
বাঁধনের রিংগুলি ছুঁয়ে।
……………............
শিলাই
দিনান্তের নির্জনতায় যে ডুবগুলি
লুকিয়ে রাখ তোমার শরীরে; অন্তহীন
শিলাই আমি তোমার মুখ পড়ে নিই
চোখের কাজল জুড়ে যে মেঘ ছেয়ে আছে
রামগিরি; নীল জোৎস্নায় ফুটে ওঠা শব্দগুলি
আড়জোয়ালি করে; ভাঙে নিশান্তের দরগার
কড়িকাঠ;রাত্রিজুড়ে পঞ্চ শরাঘাত।
শুয়ে থাকে বালুচর; অনন্ত অবকাশ
দিকচক্রবালের অস্থিগুলি ছুঁয়ে ছুঁয়ে
এ প্রেমপত্র কাকে পাঠাও তুমি; শব্দ
ভাঙতে ভাঙতে পরকীয়া উঠোনের শ্বাস
ঘিরে তোমার সংসার; শৈশবের বন্ধ ঘরে
তালা দিতে দিতে বার বার ধরতে চায়
ফেলে আসা নিঃশ্বাসের গন্ধ; উড়ন্ত আঁচল
আর নীল জোৎস্নামাখা নিঃসঙ্গ রাত।
…………………............
আঘাত
অনেক আঘাত হয়তো অতলে
তলিয়ে যায়; সত্যি যায় কী?
না শরীরে জেগে থাকে?
এঞ্জেল প্রপাতের ধ্বনি বারে বারে
আঘাত হানতে থাকে মাটি পাথরকে;
জমাট বাঁধা যন্ত্রণায় জীর্ণ হয়ে গেলেও
বোবা হয়ে থাকে জমাট মাটির কঙ্কাল।
নালান্দা; তক্ষশিলা; সারনাথ----
আঘাতে আঘাতে ভেঙে যায় গুল্ম শ্রী।
গাছের জটায় যে কোপ পড়ে;
অনর্গল অশুচি আঘাতে কুঠার;
এক এক করে কেটে নেয় হাত পা---
কুঠার মনে রাখে না; গাছ মনে রাখে
অক্ষরের পাথরে জমানো আঘাত
একদিন শিরার গ্রন্থি
বেয়ে বেয়ে নক্ষত্র জালিকায়।
ঝর্ণার জলবিন্দু রাশি রাশি
প্রপাত হয়ে ঝরে; নদীর পরিণয় পান্ডুলিপি
নদী মনে রাখে; গাছ মনে রাখে
ভাবতে থাকে অনুজ সময়
ক্রান্তি মেরু পেরোতে পেরোতে
ডিঙিয়ে চলে বিষুবর প্রান্তিক দাগ।
আঘাত জেগে থাকে; মনে রাখে
পাহাড়; মাটি; গাছ।
…………………
কবিতার গেরস্থালি
অবসর যাপন ঘিরে কবিতার ঘর-সংসার
ভিতর থেকে কত্রীর বাজখাঁই গলা; তোমার
দিনরাত কবিতা করলে হবে? সংসারে মন দাও;
সত্যিই তো! ইস; একদম সত্যি;
দায়বদ্ধতা হারিয়ে যাচ্ছে;
পুকুরের তিরতির ঢেউ;
ভেঙ্গে যাচ্ছে জলমুখ আয়নায়; ঠোঁটের গালিচা।
ভাবি আমি কি দিয়েছি কবিতা ও সংসারে!
কিস্যু না; কিন্তু সংসার দিয়েছে আমায় একটা বেড়া দেওয়া ঘর
বেড়ার উপর সাজানো ফুলের লতানো বাগান
মাধবীলতা;অপরাজিতা; তরুলতাদের
বাতাসের সাথে কত কথা; দোল খাওয়া....
প্রতিদিন সকালে টুনটুনিদুটো
প্রেম করতে আসে আমার বেড়ার বাগানে
ঘর বাঁধার গল্প করে; বলে কবিতার কথা
তারপর কবিতার মতো লুকিয়ে পড়ে বেড়ার বাগানে
সংসার কি ঠিক এইরকম! আমি খুঁজতে থাকি
বাঁধন আর বাঁধন ভাঙ্গার উল্লাস?
অভিকেন্দ্র অপকেন্দ্রের ঘূর্ণন গতি?
অনু পরমাণুর ভার সইতে সইতে কবিতাও
হয়ে ওঠে সাবালক ঘর বাঁধতে চায়
টুনটুনিদের মতো; গড়ে তুলতে চায় কবিতার ঘর
গিন্নির ঘর বাগান জুড়ে সুখী তিতির মুনিয়া ছাতার।
………….…………
সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
প্রচ্ছদ - ইন্টারনেট
ঠিকানা -সুরতপুর, দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১
কথা - 9434453614
অসাধারণ লেখা গুচ্ছ। মুগ্ধতা জানাই। 🌷🙏
ReplyDelete