তপনজ্যোতি মাজি এর গুচ্ছ কবিতা
পালকের শার্ট
তার পতাকার রঙ চিনি। আমার কবিতা তাকে মনে করে শপথের নদী। পালকের শার্ট গায়ে
হেঁটে যায় অন্যমনস্ক প্রেমিক। সে আজ বাড়ি
নেই জেনেও দর্পণে তার প্রতিবিম্ব খুঁজি।
হিরন্ময় আগুনে পোড়ে মৃত্যু। তপস্বী জলে তর্পণ
করে অরণ্যের গভীরে পৌঁছে যায় বিবিধ সংবাদ।
শুধু তার বাষ্প ঢাকা মুখে বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখে
লিখে রাখি অন্য প্রস্তাবনা। নাম মুছে, সংলাপ
মুছে,দেখি তার তন্ময় গায়কী।
আমার অধিকার নেই মৃত্তিকা ও আকাশে। তবু
শ্রেষ্ঠ রমণীর কাছে নিজেকে সম্রাট ভাবি, ভাবি
ভিক্ষুক কিংবা উন্মাদ। পালকের শার্টের পকেটে ভরে নিই জন্ম, মৃত্যু ও প্রথম চুম্বনের তারিখ। নক্ষত্র পুরুষের মতো রাত জেগে লিখি দিবস নিষিদ্ধ পংক্তি।
______________
রবিবার
আসবাবে অবসর চিন্হ। গ্রন্থে গ্রন্থে বন্দি অক্ষর।
বাচিক ক্লাসের দিদিমণির অন্তরে বৃষ্টির অনর্গল
উচ্ছ্বাস। আষাঢ় এলো। মেঘেদের চঞ্চলতা দেখে
বৃক্ষে বৃক্ষে স্নানের প্রস্তুতি।
স্নানঘরে রবিবার। জল বোঝে শরীরের অপঠিত
ভাষা। বিন্দুতে বিন্দুতে রূপতৃষা,কলিদাসী বর্ণনা।
মহাকাব্যিক রমণীরা বিপন্ন পুরুষ-তারল্যের কাছে সংযমহীন বিক্রম হত্যা করে নারীমন।
মুক্তির সংকেতে বৃষ্টি পড়ে জনপদে। সুবর্ণ সময়ের
গান পাঠিয়েছে প্রেমিক। মেঘলা দিনে একলা হয়ে
যায় মন। বৃষ্টি জানে ভূমিঢাল, প্রবাহের অনুকূল
পথ,মনের নাব্যতা।
মহান সম্ভাবনা দিয়ে দিন শুরু হয়। সূর্যোদয় এবং
সূর্যাস্ত ঘিরে ট্যুরিস্টদের অতি সক্রিয়তা। গৃহবন্দি
ঘুম খোঁজে বালিশের সাহচর্য। চর্যাপদ আচরণ
বিধি। তোমাকে জড়িয়ে ধরে লখিন্দর হবো।
________________
সংগৃহীত
তথাগত তাঁর প্রসন্নতা মুখময় ছড়িয়ে দিয়েছন।
জাগতিক হয়েও মহাজাগতিক। বিকীর্ণ এই দীপ্তি কি আমাদের উত্তরাধিকার?
শরীর সবসময় শরীর নয়। মহাকাশ। হৃদয়স্থলে
অযুত নক্ষত্রের নীল আলোর ধ্বনি কেউ শুনতে
পায়, কেউ পায়না।
গার্হস্থ্য জীবনের দেরাজে ভাঁজ করে রাখা তাত্ত্বিক
জীবনবোধ। মোড়কের নাম ধর্ম কিংবা দর্শন। বুঝে
নিলেই মহাজীবন।
গদ্য ও কবিতা পৃথক কিছু নয়। পর্যবেক্ষণ এবং
অনুভব। সংসার জীবনে কেউ কেউ কস্তুরীর মতো
সঙ্গে রাখেন অনিঃশেষ সুবাস।
ঈশ্বর এবং মহাজীবন। কার সঙ্গে দেখা হয় নিভৃত
নৈকট্যে? কার কাছে রাখো নীরব স্বীকারোক্তি? কে
মাখে আলো শরীরে ও মনে?
সব বোধই সংগৃহীত। কে আর বুঝতে পারে অব্যক্ত
কথা? যে বোঝে তার সঙ্গে তরঙ্গের মিল। প্রবুদ্ধ
প্রেমিক কিংবা বিদুষী প্রেমিকা।
_______________
কবিতা সংগ্রহ
সারারাত আকাশের কাছে ভিক্ষা করেছি নির্মোহ
উত্তাপ। সংগৃহীত শস্যে আমার কোনও অধিকার
নেই। ফিরে যায় বাউন্ডুলে বাতাস। আমি দেখছি
ভোরের সন্ধিক্ষণে তোমার ঘুম থেকে পরী শরীরে
উড়ে গেল স্বপ্ন।
সমস্ত প্রত্যাশার বীজে জল দিতে দিতে অবহেলা
করেছি সময়ের সংকেত। আগুনে ও জলে বিপুল
বৈরীতা দেখেও, ভেবেছি একদিন সর্বজনীন ইচ্ছা
মিলিয়ে দেবে অস্ত্র ও ক্ষমার দ্বন্দ্ব। তোমাকে পড়ে
শোনাব পৃথিবীর প্রথম কবিতা।
কবিতা সংগ্রহ থেকে নির্বাচন করেছি নির্বাণ এবং
নৈঃশব্দের কবিতা। এক ঋষি তপস্যা করছেন মন
বা মস্তিষ্কের কোথাও। জীবন অতিক্রান্ত এই ধ্যান
ঘিরে আবর্তিত হয় পার্থিব ব্যাখ্যা।
তুমি অনিশ্চিত মেখলা সরিয়ে উন্মোচিত করেছো
অন্তরতম রূপ। বহুমাত্রিক জীবনের ভাঁজে ভাঁজে
রঙিন সুতোর কারুকাজ। নির্বাচিত কবিতার মতো
গ্রন্থ প্রচ্ছদে তোমার ঘুমভাঙা মুখ।
_______________
অথ উন্মাদ উন্মাদিনী কথা
এক.
সরিষা ফুলের রঙ নিয়ে তর্ক হলো হাউসফুল।
পাগলী পাগলকে বললো উন্মাদ
পাগল পাগলীকে বললো উন্মাদিনী।
নিয়ন আলো নিভে গেলে দুজনেই হাসতে হাসতে
ঘুমিয়ে পড়ে বট পাতার বিছানায়।
দুই.
ঘুম ভেঙে যায় ভোরের ট্রেন শহরমুখী হওয়ার আগেই।
উন্মাদিনী কাগজের আগুনে চা তৈরি করে দুকাপ।
উন্মাদ সংগ্রহে রাখা বেকারীর এস বিস্কুট বার করে দুটি।
তারা স্বপ্নের কথা বলে।
তারা ব্যর্থতার কথা বলে।
দুজনেই সহমত হয় পয়সা জমিয়ে একদিন তারা
উড়োজাহাজে চড়বেই।
তিন.
সারাদিন উন্মাদ সংগ্রহ করে আগুন।
সারাদিন উন্মাদিনী সংগ্রহ করে জল।
বৈপরীত্য জমিয়ে তারা গড়বে ঘর।
অভিযোগ জমিয়ে তারা করবে প্রেম।
উন্মাদিনী উন্মাদকে বলে পাগল।
উন্মাদ উন্মাদিনীকে বলে পাগলী।
চার.
পার্থিব প্রেম আসলে সোনার পাথর বাটি।
পাগলী পাগলকে বলে উন্মাদ।
পাগল পাগলীকে বলে উন্মাদিনী।
___________
সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
প্রচ্ছদ চিত্র - সঞ্চিতা দাস
ঠিকানা -সুরতপুর, দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১
কথা - 9434453614