সত্তা
মৌমিতা পাল
স্মরণ বিস্মরণকে মাথায় রেখে বলছি
অর্ধরাতে একা চলেছি
এক ঘটনাক্রমের পুনরাবৃত্তি ক্লান্ত করে
দাম্ভিক শহরে বসে কান্না গিলতে শিখতে হয়
ছত্রিশ রাগিনীতে দুহাত বাড়িয়ে ডেকেছি শূন্যতা
প্রতিশ্রুতিশীল একাকীত্ব অকারণ অর্থহীন
শামুক সকাল উন্মাদের মতো
মাইল মাইল হেঁটে গেছে
প্রেমিকেরা মিথ্যে বলে আর প্রেমিকারা হিংসুটে
সহজে আমাকে বইতে পারবে না বলে
বসতিনির্মাণ, বংশরক্ষায় মন দিয়েছে যারা
তারা কোথায় চলেছে- মহাপাতাল নমো নমো নম !
আমার দুচোখ খুলে নাও অন্ধ পৃথিবী
শুধুমাত্র বিশ্বাসগোচর থাকো
নিঃস্ব পদ্মের প্রবল টানে
আমি দেহহীন মনহীন কান্না হয়ে সমাধিস্থ হবো
…………………
অবুঝ বোধের ভেতর
খুকু ভূঞ্যা
একটা ভুলের প্রয়োজন ছিল তাই
একশো আট নীল পদ্মের আয়োজনে এক খাবলা রাত গিলে ফেলেছি সচেতনভাবে
নিখুঁত শুদ্ধতা পাছে তীব্র অহংকারী করে তোলে
তাই গোপনে অঙ্কিত কলঙ্কের রেখায় রোজ একবার করে
ফুল দূর্বা ছড়িয়ে দিই
ভুল এতো কুৎসিত নয় অন্ধকারের কোণে বসে তার চিতা জ্বালতে হবে চুপিচুপি
তাকে কখনো একটি গোলাপ দেওয়া হয়নি আমার
একটি কেতকী ধুতুরা অথবা একমুঠো হিজল
তবু এতো ফুলের অনুভব চারপাশে এতো কাঁটা
সুন্দর যন্ত্রনা
এতো আনন্দ দহন--
কেউ বোলো না আমি বিগড়ে গেছি
অবুঝ বোধের ভেতর আড়ষ্ট উদাসীন
একা বাঁচার থেকে তার পদচিহ্ন আঁকা থাক
ধূসর হৃদয়ের গভীরে--
……………...
স্রোত
সোনালী মিত্র
এক দুরন্ত বিকেলে এখনো খুঁজি তোমাকে।
শহরের রাস্তায় ভীড় কোলাহলে কোনো শাড়ির আঁচলের মিষ্টি ছোঁয়া যেন তোমার শরীরের নরম স্পর্শ আমার বুকের ভিতরের সবকটা সুর একসাথে বলে ওঠে আমরা এখনও আছি।
শহরের মায়াবী আলোয় হাতে হাত রাখা কোনো যুবক যুবতীর মৃদু আলাপের নূপুরের শব্দে আজো তোলপাড় করে খুঁজি তোমাকে।
ভীড়ের গভীরে আমার দুচোখ যখন নিঃশব্দে চয়ন করে চেনা কোনো অতীত
চারপাশের কোলাহল
দুহাতে সরিয়ে আমার রাগিনীরা বলে ওঠে আজো আমরা সেভাবেই আছি।
………………......
সোনালি আতর
সুলক্ষণা
রোজ হাতের রেখা মুছে,
লিখে রাখি পলাশের স্বপ্ন
পরত পরত জমে প্রতিক্ষণ
সাত সাতটা পরত রাঙা
সাত জন্মের গোলাপ গুঁজে
ঘুম ভাঙে, দেখি...
লাল টুকটুকে চেলিটা
ভিজে গেছে টাটকা রক্তে
রক্তের এক অদ্ভুত গন্ধ হয় যেন
বাসি জুঁই ফুল
তোমার শব্দগুলো সব
যত্নে ঝকঝকে
ভালোবাসার নাম,"যত্ন"
তাই গলায় মালা হয়ে,
কান থেকে খসে পড়া দুল হয়ে,
লালসিঁথি বরাবর দলছুট মন হয়ে,
বাঁ হাতের কাঁকনে লেখা বাঁধনের ছবি হয়ে---
কঠিন সোনায় মোড়া নরম লাল
সব রাজকীয় রং
স্পর্শের গল্পগুলো বরাবর দায়িত্বহীন হয়
আতরে ঘোর লাগায়
কিন্তু...
শুকনো গোলাপ বাগিচায়
দূর থেকে ভেসে আসে সেহনাই
যত্নের গাঁথনীতে ফাটলবিহীন ইট।
চুপ করো পাখি, শব্দহীন হও
এখানে আনারকলি দাফন আছে
……………........
সখি
অপর্ণা দেওঘরিয়া
উড়ন্ত মন খুশির বাতাস উড়িয়ে যাও নিরুদ্দেশে।
সোনালী সকালে রৌ দ্র মেখে বেড়িয়ে পর
পাহাড়,বন জঙ্গল গাছ গাছালি
তোমাকে স্পর্শ করে অমর কাননের দেবদারু।
অমল হৃদ্য় অন্তর ছুঁয়ে অজস্র ঢেউ,
আমার ক্ষুধার্ত সুখ দুঃখ যন্ত্রনা বিষ
পিষে দেয় শুধু প্রার্থনা সঙ্গিতে যেন
যাবতীয় ছদ্মবেশের পিরীত নামাবলির শত প্রশ্নে।
গোপন অভিসারে দুর্লভ চরন তলে
আমি শপথের আঁচল পাতি অঙ্গবাস খুলে,
আতিশয্যের স্বপ্নে, বিশ্বাসে অজস্র গোলক ধাঁধায়
বাঁশির ডাকে কানপাতি তোমার সখি হবার সাধে।
……………….
একটু দাঁড়িয়ে যাও
বৈশাখী সিংহ রায় (পাণ্ডা)
শোন, বাইরে খুব মেঘ করেছে,
বৃষ্টি আসবে এখনি।
একটু দাঁড়িয়ে যাও।
জানি,ঝড় এখন উড়িয়ে নেবেনা আমাদের।
আমরা সামলে চলতে পারি যে যার মতো ।
তবু ভারি বৃষ্টিতে নাই বা ভিজলে।
আগের মতো তো নেই আমরা ।
শুধু একটু বসে যাও।
এই 'একটু'র জন্য কত অপেক্ষা ছিল,
এই 'একটু'র জন্য তুমি মহুয়ার নেশায় মাতাল ছিলে,আর আমি তোমার পলাশ প্রিয়া!
এই 'একটু'র জন্য তখন কত ঢেউ সাঁতার উতলা নদীতে!
শোন,একটু দাঁড়িয়ে যাও
তোমার যোগ্য গান লিখেছিলাম মেঘের কালি দিয়ে
আমাদের সহবাসের বাসী দিনগুলো কাগজে রেখেছি স্বপ্নের ঝাঁপি ভরে।
খোঁপায় পরিয়ে দেওয়া বুনো ফুল থেকে এখন কেবলই আঁশটে গন্ধ।
শোন...
একটু দাঁড়িয়ে যাও...
তুমি বলেছিলে খেলাঘর নাকি ভেঙে গেছে
এই দেখো,আমি সাজিয়ে রেখেছি আচার
কুলুঙ্গিতে,ত্রিফলা-আমলকি মশলার তাকে,
অর সুগন্ধি শাড়ির ভাঁজে।
আমি নিজের ঘর খুঁজেছিলাম দীর্ঘ পথ
দেখো,আমি আর খুঁজিনি তাকে।
আমি একাই বেঁধেছি চালাঘর
মনে গোছানো আছে সহবাস
তারি সাথে নিত্য বসবাস।
……………........
বাঁশি
মিঠু মণ্ডল
চারপাশে শব্দের গুঞ্জন, বিস্ফোরণ আর ধ্বংস
আবার সৃষ্টির ও অবিরাম স্নিগ্ধ উচ্চারণ।
তখন মৃত্যু বীজ হাতে নিয়েও মৃদু পায়ে এগিয়ে যাওয়া শুধু নীল যমুনায়, কৃষ্ণ বাঁশির দিকে।
নদী রঙ থেকে উঠে আসে জলের পদছাপ,অগ্নিপ্রভ আলো।
নিঃশ্বাস কি শুষে নেয় ছিটকে আসা উল্কাখন্ড।
আলো ছড়ায় মায়া বিকেলের রোদ,
তার মাঝেই জলোচ্ছ্বাস।
এক-পা,দু-পা এগিয়ে দিব্যগর্ভা স্তোত্রের মতো মিশে যায় জন্মান্তর-কৃষ্ণ বাঁশির সাথে।
………………..
প্রেমিকা চাতক পাখি
মৌসুমী দোলই
একরাশ আশার দৃঢ় অঙ্গীকার,
রোড এরপর ফুটপাতের অংশীদার
হয়তো পরিপাটি পর্যাপ্ত পরিমাণে না হলেও, নজরদারি বাড়বে
একগোছা চুড়ি দিয়ে তোমাকে পুরোপুরি আগলে রাখবে।
ভালোবাসি ভালোবাসি বলে মরিয়া হয়ে উঠবেনা,
কিন্তু, ভালো আছো অবশ্যই জিজ্ঞেস করবে।
গীটার, হ্যান্ডসাম না হলেও চলবে।
গ্রীষ্মের দিনের চাতক পাখির মতো তাকাবে, আধো আধো মেঘে।
শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে অনুভূতি গুলো জড়িয়ে রাখবে।
প্রেমিকা বলাও ভুল প্রিয় বন্ধু নাবিক হবে।
শরীর ছুঁয়ে নয়, অস্তিত্বে বিলীন হয়ে ভালোবাসবে।
…………………..
প্রেম
পল্লবী ঘোষ
তাকিয়ে দেখো আকাশের দিকে
ঘুম যদি না আসে
কাছে আমায় পাবে তুমি
যেই তুমি হাত বাড়াবে
যদি আমায় না পাও
তবে জানবে সে দিন আমি আর নেই
মনে পড়ে তোমাকে
যখন থাকি নীরবে
স্বপ্ন দেখি তোমায় নিয়ে
চোখের প্রতিটি পলকে
ভাবি শুধু তোমায় অনুভবে
বিশ্বাসে ও নিঃশ্বাসে
বড়ো আপন ভাবি তোমাকে।
……………..
যাপন-চিত্র
শিল্পী গঙ্গোপাধ্যায়
খুদ-কুঁড়ো যতটুক ছিল,
দু'জনের একমুঠো হয়ে যেত আজও..
উনুন জ্বলেনি,
জ্বালানি ভিজে গ্যাছে রাতভর বৃষ্টিতে
অমলিন সুখে মেয়েটি বসে আছে
নিরন্ন ছেলেটির পিঠে পিঠ রেখে।
ধূপছায়া দিন -
ভিজেকাঠ শুষে নিতে চাইছে উত্তাপ।
ও সুজন,বন্ধু আমার -
রোদ দাও, দাও সোনালী আকাশ।
হাওয়ায় ভাসছে প্রেম
প্রেম আজ চাইছে আগুন,একটু আগুন ।।
……………...
পুনর্বার
সুমিত্রা সাউ গিরি
তুমি এসো ওই সরষে ক্ষেতের পাশে
পূর্ণিমার চাঁদ-তারা মেখে।
হাতে হাত রেখে হাঁটব পাশাপাশি
হলুদ নদীর পাড় ধরে।
সোনালী ধানের ক্ষেত, ফুটফুটে জোৎস্না, আর ঝিকমিক নদীর জল
দেখব দুজনে নন্দিত মনে।
ডুবে যাব হৃদয়ের আবেগে
চোখের ভাষায় ভালোবাসি বলে
শুষে নেব পৃথিবীর-রূপ-রস-গন্ধ।
জীবন আছে,বোধ আছে, জীবনের সাধও আছে
হারিয়েছে শুধু সময়ের ঢেউ।
রাত-জাগা চোখ খুঁজে নেবে সমাধান।
বিপন্ন-বিবর্ণ হৃদয়কে আলোকিত করার।
পুনর্বার নতুন ভোর মেখে
নব অনুভূতির আবেশে
জন্ম দেব এক নতুন প্রেমের।
বেলা শেষে গাইব মোরা
আবার ভালোবাসার জয়গান।
………………..
বকুল ঘ্রানে
কবিতা পাল
তুমি লিখেছো আজ কাটাকুটি
খেলার দিনে চলে এসো ম্রিয়মান অস্বচ্ছতায় ঢেকে রাখি দুটি শরীরকে
যেমনটা মেঘলার ঢাকা ওই আকাশ খানি।
দোলায়িত পর্দার আড়ালে নীল আলোয় এসো খেলে নিই সেই খেলা
এই ঘুমের শহরে বকুলের ঘ্রাণ নিয়ে যারা মাতাল হয়
তারা এমনি বেপরোয়া হয়
তুমিও এসো পাশাপাশি হই হৃদয়ের করিডোরে
তন্ত্রে এসরাজ অবাধে বাজুক রাতের তিথি ভোরে।
………………
হয়তো বা কাল আর থাকবো না
মৈত্রেয়ী পাল
হয়তো বা কাল আর থাকবো না
টবের গোলাপ গুলো পাপড়ি ঝরিয়ে দেবে এভাবেই।
তোমার নীল চোখের সমুদ্র ঢেউ
শীতের সন্ধ্যায় ওড়না ভিজিয়ে
খোলা জানালায় যেভাবে হারিয়ে যেত ...
শুকনো বালির পাঁজরে এরপর পড়ে থাকবে শুধু উন্মাদ মরুভূমি।
সন্ধ্যাতারার কাছে নীরবতা চেয়ে নিয়ে
আরেকটু অপেক্ষার কথা বলবে হয়তো বা কোনো মৃত্যু-উপত্যকা|
আমি জানি তুমি হারতে শেখোনি কোনোদিন ,
তোমাকে জিতিয়ে দিতে দিতে
পরাজয়েই আমি সুখ ভরেছি টলমলে শিশির শরীরে।
পুড়ে যাওয়া ভোরের অযাচিত দুঃস্বপ্নে
আগুন প্রত্যাশায় যেদিন আমি
গেঁথে ছিলাম রক্তকরবীর গীতবিতান ....
সেদিন বুঝেছিলাম
ভালোবাসা মানেই অপরিতৃপ্ত আত্মার নীরব মৃত্যু,
অসুখের দাবানলে শরীর পুড়লেও
পুতুল রঙের স্বপ্ন গুলো তবুও বেঁচে থেকে যায়।
………………
কেমন আছ তুমি
বনশ্রী রায় দাস
গ্রাম নগরের উঠোন জুড়ে আঁকা শীত রোদ্দুর
পৌষী পূর্ণিমার আলো এসে পড়লে
মাটির দালানে গাছে গাছে বেজে ওঠে
ধ্রুপদী অভিলাষ ।
ইচ্ছেরা আমার ভিতর চুপিসারে
ভেসে যায় মেঘের ইশারায় ।
দুরু দুরু আলোড়ন নিয়ে গোধূলি নির্জন
বিশেষ কেউ যখন জানতে চায়
কেমন আছো তুমি ?
সমস্ত বিষাদগাথা পালক হয়ে উড়ে যায় ।
কষ্ট দহন ভুলে নদীর কাকলি কাছাকাছি
খুলে যায় গোপন সিন্দুক
চোখে নক্ষত্র ছুঁয়ে দাও যদি
বুকের গভীরে জ্বলে ওঠে হাজারো ঝাড়বাতি
কয়েকটি মাত্র শব্দ কেমন আছো তুমি ।
……………...
অপেক্ষা
প্রিয়াঙ্কা মজুমদার
মন খারাপি আড্ডার মাঝে
ভালোবাসা কষ্ট পায় বারবার।
সন্ধ্যা নামা আলোর সৌন্দর্যে
শহর ঢেকেছে স্মৃতির ধোঁয়ায়
আমার একপেশে ভালোবাসাকে
সঙ্গী করে বসে আছি ত্রিফলা
আলোর নীচে।
জানি তুমি আসবে -
গোলাপ হাতে,ভালোবাসার আতর ছড়িয়ে
তায়,তোমার অপেক্ষায় আমি সময়ের সাথী প্রহর গুনে চলেছি
শুধু তুমি আসবে বলে।
……………….
আলম্বন
উমা মাহাতো
আমৃত্যু বুকের খাঁচায় যে নির্বাক বয়ে বেড়াবো,বাতাসের গুণে তারই ঘরে ঝড়, নিম্নচাপ, অবাধ্য বৃষ্টিপাত, দফারফা..
প্রকৃতি শূন্যস্থান ভালোবাসে না।বিরহখণ্ড ছাড়া পদাবলী হয় না।আমি মানুষের মতো।
জড়িয়ে ধরার মতো ঝিঙে ফুলের লতা উঠোনের স্বপ্ন দেখলেই পুঁতে রাখি।
………………..
আমার বিহনে
সুজাতা চক্রবর্তী
আমার বিহনে তোমার হৃদয়---
দলিত-মথিত হয়েছিল!
সত্যিই কী ?
নাকি এ কেবল কথার নকশায় গাঁথা কথার মালা!
আমার বিহনে বিষাদের মেঘ জমেছিল কি,
তোমার হৃদয় আকাশে ক্ষণকালের জন্যেও?
আমার বিহনে বুকফাটা ক্রন্দন উঠেছিল
তোমার মন মধুপুরে ক্ষণিকের লাগি !
আমার বিহনে তোমার আঁখিপাখি
কখনও হয়েছিল চঞ্চল ?
আমার ধেয়ানে কথার স্বরলিপির শৈল্পিক মহিমা ..
কিছু অনুপলের জন্যেও এলোমেলো হয়েছিল ?!
সেকেন্ড মিনিটের ঢেউ পেরিয়ে ঘড়ির কাঁটা ,
একটি ঘন্টার বন্দর ছুঁয়ে--
আর এক বন্দরের দিকে-
পাড়ি জমিয়েছে নিতিনিতি!
কিন্তু তোমার পরাণ বীণার সুর,
কিছু অনুসেকেন্ডের জন্যেও উদাস হয়েছিল?
ব্যস্ততার অথৈ হাতছানিতে--
আর , পারিপার্শ্বিক উচ্ছলময় উদ্দাম স্ফূর্তির মাঝে,
মনের গতি ত্বরান্বিত হয়েছিল
কয়েক মাইক্রোসেকেন্ডের জন্যেও?
ফেলে আসা দিনগুলিতে ছিটেফোঁটা রক্ত লেগেছিল..
তাপিত তনু মনের কোষমুক্ত তরবারিতে !
আকাশের মতো উদার হিয়াতে
ব্যাথাতুর চিন্তার পাখনা ডানা মেলেছিল---
নিভৃতে নিরান্তরাল থেকে?
আমা-বিহনে আমার স্মৃতি --
নিবিড় যামিনীর আঁধারে
তোমার নয়নপাপড়িকে করেছিল কী তন্দ্রাহারা?
আমার ধেয়ানে হয়েছিল কি -
প্রিয়,অপ্রিয়ের ব্যবধান!
এসব শব্দে গড়া অলংকার নয়,
হে 'বন্ধু'
এ কেবল প্রশ্নরাজির সৌধ নয় ---
এ আমার তোমার কথিত পাষাণ হিয়াতে অনুভূত
প্রতি দিনলিপির ব্যাথাসমূহের প্রশ্বাস!
………………….
পদ্মপাতার শিশিরজলে
যূথিকা দাস অধিকারী
ঐ যে সেদিন রেখেছিলে পদ্মপাতার শিশিরজলে
সাত জনমের প্রেম!
যে প্রেম আজও বাসর জাগে চাঁদের ঠোঁটে,
তারার ভালে,নীহারিকার ছায়ে,
একলা বুকের ঝংকারে যার নাম নাজানা ব্যথা !
ঐ যে হোথায় কলমিলতায় বেঁধেছিলে তাসেরঘর
নিঝুম রাতে মেখেছিলে মনের আতর পরস্পর !
আজও সে সুখ বিরাজ করে জলমাকড়সার
চিকন ঘরে,পাহারা দেয় নীল জোনাকির
আলোর নকশিকাঁথা।
শরীর জুড়ে যেদিন তোমার পদ্ম-শালুক মেলা,
ভোমরা এলো গুঞ্জরনে ,কুঞ্জে পল্লিবালা।
ভাসিয়ে কলস অশ্রুনদে কলমিলতার কাছে
বলেছিল প্রেম কী গো?তার কী হৃদয় আছে?
প্রেম কী বোঝে বুকের ব্যথা ,ঘর হারানোর মর্মকথা,
শক্ত গেরোর আলগা বাঁধন রাখবে তোমার কাছে?
শীতল মায়ার আলো ছায়ায় যেমন করে
প্রেমের শিশির পদ্মপাতায় আছে!!
……………….
নিমন্ত্রনের চিঠি হাতে
মৃণালিনী
বিয়ের তারিখ যখন আসবে ততদিনে যদি মরে যাই
কিছুই বদল হবে না প্রকৃতিতে,নতুন বউের গোলাপি মুখে হলদে কাঁচা রঙ
আমার বুকের রক্তগোলাপে ফুলসজ্জার ঘর
রক্তশূন্য শরীরে আমার উপস্থিতি বাস্তবে কোন প্রয়োজন পড়বে না
আমার বেঁচে থাকা বা মৃত্যুর কোন গুরুত্ব নেই,
নেই জেনেই বরং আমি খুব খুশি।
যদি জানতাম আগামীকাল আমার মৃত্যু নিশ্চিত অনুষ্ঠান শুরু হবে পরশু শান্তিতে মরব
কারণ শারীরিক মৃত্যুর পরে শুরু মানসিক মৃত্যুর আয়োজন
এটাই যদি ভবিতব্য হয় তাহলে সূচনাকাল শুরু হোক
ঠিকঠাক সময় মত
সবকিছুই পলকহীন বাস্তব আর পূর্ব নির্ধারিত অমোঘ সত্য
তাই কুয়াশার চেয়ে চৈত্র দুপুরের সূর্য বেশি পছন্দ
কারণ আমার পছন্দ না হলেও বিবাহ ঘটবে
আর আগামীকাল মরে গেলে মুক্তি
তুমি নিশ্চিন্ত ভুবনে নতুন ভবণে অনুষ্ঠান।
নিমতলার ঘাটে ধিমি আঁচে তখনও আগুনের অনুরণন...
তুমি চাইলে চিতার আগুনের উষ্ণতায় ঝরাতে পারো
এক ফোঁটা জল
চাইলে বৌয়ের গলায় গান,পরকীয়ায় নাকেমুখে ন্যাকামির আহা! ফিসফিস কন্ডোলেন্স। পছন্দ-অপছন্দ গুরুত্বহীন বলেই
শেষবারে প্রথমবার বলব, আমার কোন পছন্দ নেই যা ঘটবার কথা,
তখন তা ঘটবেই, মৃত্যু হলেও বলব, যা হয় সব মঙ্গলের জন্যে...
……………….
বাঁক
মৌপর্ণা মুখোপাধ্যায়
নদী বলেছিল
ওর প্রতি বাঁকে সৌন্দর্য্য
তখনই কোপালজুড়ে
বেশ কয়েকটি
নদীর মতোই বাঁক দেখি।
ওরা বলেছিল
তোমার বয়স হয়ে গেছে।
নদী বলল তুমি আজ
অনেক পরিণত
বয়ে চল আপন পথে।
…………..
নীরবতা
সুদীপ্তা মাইতি
ঘরে ফেরা ভুলেছি আজ ,
তবু উলের কাঁটা শপথ নেয় ,
ঘর গুনে চলবার ।
পুরোনো গিটারেরা জানে
কতটা নীরবতার সুর আছে
ট্রামলাইনের ফাঁকা রাস্তায় ।
পাঁচিলেরও বয়স বাড়ে ,
ছাদেরাও ভিজতে ভয় পায় !
সাহসী চিঠিরা খামহীন হয়ে ,
বৃষ্টিতে ভিজে একাকার ।।
……………….
নীরবতার আর এক নাম ভালোবাসা
কবিতা সামন্ত
শুধু কি ভালোবাসি বললেই ভালোবাসা হয়?
প্রেম তো অনূভুতি যা বুঝে নিতে হয়,
লোকালয়ে প্রকাশ করাটাই কি ভালোবাসা?
ভালোবাসা সে তো হৃদয়ের গোপনে থাকে,
ভালোবাসালে কি কাছে আসাটা জরুরী?
না গো না দূরে থেকেও ভালোবাসা যায়,
যার অনূভুতিতে সব কিছু সুন্দর হয়ে যায়,
কেমন দেখো সূর্য আর প্রকৃতির ভালোবাসা,
একে অপরের থেকে অনেক দূরে থাকে;
তাদের মধ্যে যে রয়েছে অনন্ত ভালোবাসা,
নদী আর চাঁদকে দেখো কেমন গভীর প্রেম,
চাঁদ থাকে ওই দূরে রাতের আকাশের গায়,
আর নদী পৃথিবীর বুকে চাঁদকে ভালোবেসে যায়,
চাঁদনি রাতে কেমন তার রূপ যৌবন ছলচল করে,
পাহাড় আর ঝর্ণাকে দেখো ওদের কেমন ভালোবাসা,
পাড়ারকে ছেড়ে দূরে সমতল ভূমিতে আছড়ে পড়ে,
মেঘ আর বৃষ্টির ভালোবাসা দেখো কেমনতর,
বৃষ্টি মেঘের থেকে আলাদা হয়ে পৃথিবীর বুকে পড়ছে,
ওই নীলাকাশ আর সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে দেখো,
কোথায় সমুদ্র আর কোন সে দূরে থাকে নীলাকাশ,
ওদের মধ্যে ভালোবাসা যে গভীর নীরব ভালোবাসা,
যে ভালোবাসা কেউ কোনদিন মাপতে পারবেনা।
……………….......
সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
প্রচ্ছদ - লিপি সেনগুপ্ত
ঠিকানা - সুরতপুর, হরিরামপুর, দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১
কথা - 9434453614
কবিতাগুলো বেশ ভালো লাগল
ReplyDeleteসকলের কবিতা পড়া হলে মতামত জানাব।কবিতা সামন্ত সুজাতা চক্রবর্তীর কবিতা পড়লাম। বেশ ভালো। কেবল মে
ReplyDeleteখুব ভালো লাগলো সবার লেখা। সম্পাদক সহ সকল লেখককে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
ReplyDeleteখুব খুব ভালো লিখেছেন সক্কলে
ReplyDeleteউজ্জাপন প্রেম.. সুন্দর সব লেখা
ReplyDeleteভাল লাগল
ReplyDeleteশুভেচ্ছা রইল --