Friday 1 December 2017

e-কোরাস 2 নারীশক্তি

হিমেল শুভেচ্ছা।
e-কোরাস এর দ্বিতীয় সংখ্যা প্রকাশিত হলো।
এই বার তাদের নিয়েই সংখ্যা যারা সংসার সামলায় আর সাহিত্য ভালোবেসে কলম ধরে।
ধন্যবাদ নারীশক্তি।
                                                                                             দুঃখানন্দ মণ্ডল
                                                                           সম্পাদক- কোরাস


আধভেজা ভালোবাসা
  
নিবেদিতা মজুমদার

জানালা খুলে আকাশ দেখতে গিয়ে
স্ক্রিনশট্ নিই তোর লেখা পংক্তির,
প্রতিটি শব্দকোষে অন্ধকারে মিশে যাওয়া নীলিমার ঘ্রাণ-
বুকে এসে লাগে ডুবে যাওয়া চাঁদের স্নিগ্ধতা;

চেয়ে আছি একদৃষ্টে কিছু এলোমেলো কথোপোকথনের
আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা একরাত জোছনার অপেক্ষার দিনগুলোয় ভিজে!
কেমন বয়ে যায় নিরন্তর
সুপ্তিভাঙা আমলকি ফলের মতো-
আপাত আলোর পাঁচ বাই তিন কাব্য জুড়ে;

হঠাৎ বৃষ্টিতে যেদিন একই ছাতায় অনেকটা হাঁটবার লোভে
বলেছিলাম,'আমার ব্যাগে শুধুই পরীক্ষার খাতা'
ছোঁয়াছুঁয়ি করে কাঁধে হাত,শ্বাসপ্রশ্বাসের উষ্ণ হাওয়ায়
চুপচুপে হলাম দুজনে-
সেদিন ও 'খুব তাড়া আছে' বলে শেষ টুকুতে হারিয়ে দিলাম তোকে!

তারপর একদিন ফিরে গেলি নিজের শহরে,
সেলফোন, ইনবক্সের নাস্তানাবুদ জীবন,
বৃষ্টিরা ছাঁট দিয়ে যায় আজও জানালায়-
এমনি কিছু ঠান্ডা স্রোতের হাওয়া
তোর গা ছুঁয়ে আমায় ছুঁয়েছিল,
তোর ঠোঁট ছুঁয়ে ছিটকে পড়েছিল আমার ঠোঁটে ;
                    ----------------

অনিমেষ
জয়া গুহ

প্রেমের মানে কি,জানো অনিমেষ?
রোদবৃষ্টি মেখে ধুলোবালির সংসার
নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর গল্পটা
আজ ও শেষ হয়নি,
ক্যান্ডেল লাইট ডিনারে, সব আয়োজন ফুরোয় একদিন
রাত পোশাকের অহঙ্কারে,গাঢ় নীল আলো
ঝাঁ চকচকে লাল কার্পেটে স্বপ্নের সহবাস?
নিকষ অন্ধকারে তারাবাজির মত
একবার জ্বলে উঠেই নিভে যাওয়া
অনিমেষ,তালি দেওয়া শাড়ি পরে
মা আজও আঁচল বিছিয়ে হাতে মাথা রেখে বাবার কথাই ভাবে যে
আর তুমি ভাবো, তোমার পকেটের খুচরো গুলো কিভাবে হারাচ্ছে দিনের পর দিন...
                      -----------------

আমাদের একক পৃথিবীর সীমায়
রিয়া চক্রবর্তী

আমরা সবাই দাঁড়িয়ে আছি একা
কেউ কাওকে চিনতে পারছি না।

আসলে আমরা নিজের কো ছেড়ে
অন্যদের দেখার চেষ্টাও করিনি কখনো।

আজ প্রত্যেকের নিজস্ব গ্লোবের ওপর
টলটলায়মান জগৎ আমাদের তাড়া করছে।

সবাই আমরা একা একা দাঁড়িয়ে আছি
একটা এফোঁড় ওফোঁড় করে দেওয়া
আলোয় পৃথিবীর বুকের ওপরে।

আর তারপর নামে সন্ধ্যা।।
         ____________

খোঁজ
মিঠু রাজবংশী

বারবার অজুহাত খুঁজেছো
নিজেকে হারাবে বলে
এ ডাল, সে ডাল ধরেছো।
রাগ করিনি।
জানতাম, শেষে একদিন
খুঁজতে খুঁজতে
শেকড় পর্যন্ত পৌঁছবে।
শুরু থেকেই শেকড়
ধরে বসে আছি।
      _________

ছল
মৌমিতা দাস

বেশ তবে তোর নাম রাখলাম সর্বনাশের খাতায়।
যাওয়া আসার মাঝের সময় টুকু খুব কম ছিল না,
তবু কোন গদ্য লিখতে পারিনি।
মেলানো হয়নি রঙ
মিহি বালির মত যে সময় সরে গেছে ।
তোর সাথে কাটানো বেলা সত্যি ছিলনা
সত্যি ছিল বিশ্বাসঘাতক দুপুর।
            __________

ভুলে যাওয়ার প্রশ্নে
 
বলাকা সেন

তুই ও তো ভুলেছিস যে ভাবে ছায়া ভোলে সুর্যের আলো
হাওয়া ভোলে পাহাড়ের উপকারিতা

এমন করেই ভুলে যেতে থাকে হাত, স্পর্শের মায়া ;
যত পথে রেখেছে জন্ম, ভুলে যায় কুড়াতে আয়ুনুড়ি;
খন্ডে খন্ডে ছড়িয়ে পড়ে ভুল ভাগ্যলিপি।
একে একে পাতা ভুলে যায় শোক:
গাছের বুকে রাখা সবুজাভ স্বপ্নের বুনন!

আমি তো শুধু ভুলে যাওয়ার অভ্যেস করছি রোজ লিখে --
দু'চারটে কবিতা তুই ও পড়তে পারিস
কথার মিথ্যে ব্যবহার টুকু রেখে!
             ___________

হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা
জারিফা জাহান

আমি তো যাব না বলেছিলাম, তুমিই
আঙুল ধরে বোঝালে, প্রেমের পরিধি
মাপবে নদীছায়ায় : কাঁধে কাঁধ রেখে
               নিজস্ব বিকেল
এভাবে বাঁশি বাজাই, তুমি সে সুরের
মধ্যে কথা সেলাই কর, বলে ডানা ভাসালে নির্মেঘ।
আমার পালক ভারী তাই পা ভেজানো মাত্র তুমি
বললে : বিদায় !
এমন আকাশ-পাতাল তফাতে ভালবাসা হয়?
আমি বললাম : তবে যে জলে নামলাম তোমার
কথা শুনে? নদীজল বিষাদজল শান্তসলিল
কুটো ভাঙল, সোহাগপাথরে, অথচ
স্ফটিক পাথর আমার, অটুট, ভালবাসাময়।
হাসি চাপছ তুমি, থুতু ছেটান হাসি ---
বললে, 'নৈবেদ্য ভাব তবে;
প্রণিধানযোগ্য হোক এসব পাথর
দুঃখস্মৃতি,বিশ্বাসঘাতক স্মৃতি, গুহ্যস্মৃতিবুকে।'
                  ---------------

তারাদের স্বপ্ন দেখে
চৈতালী হড়

ব্যস্ততা নয়,স্খলিত স্বপ্নে কেঁপেছিল
তারাদের স্বাগত আত্মনিবেদন ৷
নিন্দিত হয়েছে পুরাণের মতে
পৌরাণিক আখ্যায়
স্থানুর মতো অধ্যাবসায়ের জীবন;
ওরা যদিও জানে
নিশিরাতে স্বপ্ন দেখা ,জলছবি ....
ভোর হতেই মিলিয়ে যায় ,
তবুও খোঁজ চলে অন্তরীক্ষে..
হাসেন ঈশ্বর !
অবোধ মন কিছুই বোঝেনা
কিম্বা জেনে বুঝে হেলায় হাসে......!!!
               --------------

আমরা দু-জন
শবরী রায়

সে আমায় ছুঁয়ে দেবে ভাবে
আমিও
তার উল্টোদিকে বসে ভাবি
মুখোমুখি স্পর্শ করেছি বর্তমান
ঘোড়ার পিঠে ডানা
ঘোড়া উড়ছে
শূন্য আর নালের সংঘাতে
ছিটকোচ্ছে আগুন
ঘোড়ার কঙ্কালে দেখি ভবিষ্যৎ
ভূতগাছে বসে আছি আমরা দুজন
           -------------

চিত্রকর
অর্থিতা মণ্ডল

এক
এখনো খই ছড়িয়ে আছে,বৃদ্ধটি দাঁড়িয়ে থাকেন
আদিগন্ত সমুদ্র-আশ্বাস। কথকতা জেগে আছে
নিশাচর ডাক।এই তো ঘামবিন্দু
একা দেহ ছিঁড়ে খায় শকুনি-প্রলাপ

দুই
এইবার উঠে আসা যাক মৈথুন-ভাস্কর্য,
স্রোতের ভেতর হাত রাখো।পুড়ে যাক সব
বৃদ্ধটি শুষে নেন রাত,প্রাচীন জনপদ

তিন
একে একে শোক জাগে,বড়ো ঘন ওম
ওঁ চিহ্ন মুছিয়ে দিচ্ছে নাভিবিন্দু-জল
                    -----------------

অবগাহন
রত্নদীপা দে ঘোষ 

ভালবাসতে বাসতে ফুরিয়ে যাচ্ছে কাচের আকাশ কাছের শুকতারা
ভালবাসতে বাসতে ফুরিয়ে যাচ্ছে প্রেমের হরিণ অরণ্যের দেওয়ালী
ভালোবাসতে বাসতে ফুরিয়ে যাচ্ছে কোলাহলের বট গাছের শিকড়
ভালবাসতে বাসতে ফুরিয়ে যাচ্ছে লজ্জালাল উড়নি পোশাকের ঢেউ

ফুরিয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের হাঁটি-হাঁটি পা ফসফরাসের সবুজ ফলন
ফুরিয়ে যাচ্ছে ডানাকাটা রূপকথা পরীময় গরিমার সাম্রাজ্য
ফুরিয়ে যাচ্ছে বীজধানের নদী চোখজলের স্রোত শাশ্বত আদর
ফুরিয়ে যাচ্ছে হাতের লেখা কাটাকুটি খেলা শুভ শিশুবেলা

ফুরিয়ে যাচ্ছে সব

তোমাকে ভালবাসতে বাসতে হারিয়ে যাচ্ছে আমার সব
ফুরোচ্ছে না শুধু গহন তোমার মাটি স্থল জলতারা
ফুরোচ্ছে না ভালবাসার কুচি একটি দুটি বসুন্ধরা
                 ------------

কলঙ্কহীন
রাজেশ্বরী ষড়ংগী

যতবার আয়ু নিয়ে বসেছি পৃথিবীর শীতল ধ্যানে ভেঙেছে চোখের পাপ বেজেছে বাঁশি।

নিঃ স্তব্ধ পাথর প্রেমের মতোই... বৈষ্ণবী রাগে বাতাস হয়েছে ধুলো।

মলাটের ও যত্ন থাকে।

শান্তিময় একটা নিবিড় স্তব্ধতা দিলে সব প্রেম
সব প্রশ্ন মেঘ হয়ে ছুঁয়ে যায় আকাশের কাছে
তার কলঙ্কহীন হৃদয় থেকে একটি স্পর্শ চুম্বন করে বার বার।
             ---------------

পাতানো সুখ
সুজাতা কয়াল

আমার জানালাতেই
আঁকা আছে গোটা এক পৃথিবী
চৌকাঠ পেরোতে গেলে
দেখি হিংস্র্  আগুন....
তাই জোনাকীর আলোয়
গুনি তোমার জানালার রেলিং।
              ----------

গোধূলি দেখলে ভয় হয়
 সঞ্চিতা দাস

তুমি জানতেও পারোনি কঠোর গাছের শুদ্ধতা,
তুমি দেখতেও পাওনি কিভাবে চিরছে বদ্ধ আলো; বিচ্ছেদের চেতনায়।

বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
হৃদয় নীরব, নিশ্চুপ
জটিলতা ক্রমেই গলা জড়িয়ে ধরে আমার, তবু হজম করে যাচ্ছি অনুচ্চারিত ক্রন্দনে,

জানো....আজ গোধূলি দেখলে ভয় হয়!
চাঁদের আদরগুলো সিগন্যাল ভাঙে,
এলিয়ে পড়ি ধূলোর সাথে..
ভীষণ বর্ষা নামে এই গুমোট অস্তিত্বে,
আশ্চর্য অসুখে হারিয়ে গেছি; টুঁ শব্দও নেই... এখনও!
                ---------------

চুম্বন
সোমা প্রধান

ধরে থাকো অরণ্য চুম্বন
বুনো গন্ধে মাতোয়ারা হও।
বিপ্লবী দাবানল একদিন
ছড়িয়ে পড়বে পাতায় পাতায়
শীতের নরম রোদ্দুর ভেবে
তুমি যুদ্ধে মাতো, আদরের।
 তারপর ক্লান্ত হয়ে ভিজে কাদা হলে
ঘুমিয়ে পড়ো নরম ঘাসে।

স্বপ্নজুড়ে বয়ে যাক মায়া
এক শতাব্দী অন্ধকার পেরিয়ে
আমি ফিরে আসবো...
ভোরের আলো মেখে
তুমি জেগে উঠবে
শিশির চুম্বনে।
      --------------

উপলব্ধি
জয়শ্রী সরকার

ভালবাসা মানে খুনসুটি নয়
ভালবাসা হলো যাতনা ,
ভালবাসা মানে দেহভোগ নয়
ভালবাসা হলো ভাবনা ।

ভালবাসা মানে ভাল বাসা নয়
ভালবাসা হলো যাপনা ,
ভালবাসা মানে সব পাওয়া নয়
ভালবাসা হলো সাধনা ।

ভালবাসা মানে শুধু রঙ নয়
ভালবাসা হলো ছবি আঁকা,
ভালবাসা মানে চলে যাওয়া নয়
ভালবাসা হলো ফিরে দ্যাখা ।

ভালবাসা মানে ডুবে যাওয়া নয়
ভালবাসা হলো বেদনা ,
ভালবাসা মানে ভেসে যাওয়া নয়
ভালবাসা হলো চেতনা ।

ভালবাসা মানে ক্ষয়ে যাওয়া নয়
ভালবাসা হলো পলি পড়া,
ভালবাসা মানে ভেঙে ফেলা নয়
ভালবাসা হলো সেতু গড়া !
            -------------

        

2 comments:

  1. প্রতিটি লেখা পড়লাম খুব ভালো লাগলো

    ReplyDelete
  2. প্রতিটি লেখা পড়লাম খুব ভালো লাগলো

    ReplyDelete

তৃষ্ণা বসাক এর কবিতা // ই-কোরাস ১৮০

  তৃষ্ণা বসাক এর কবিতা ১. মহানির্বাণ   চুন্দ, চুন্দ, এখনি এই শূকর মাংস মাটির গভীরে পুঁতে ফেলো, পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যে এই মাংস পরিপাক করতে প...