Thursday 30 April 2020

e-কোরাস ৩০//অসময়ের গল্প







অন্তরা ঘোষ এর অনুগল্প 🖋
১.
আঁধার পূর্ণিমা

"আজ বুদ্ধ পুন্নিমে!"―দীপ্তি মাসির ঝোলা চামড়ার ভেতরের চোখে খানিকটা রোদ্দুর।
―"তাতে কি হলো গো মাসি?"ঝাঁঝ সুরভীর গলায়।
―"এই পথ দিয়িই তো পতিবার  শান্তি মিছিল যায়।"
―"সেজে দাঁড়াবে না কিগো মাসি?"ব্যঙ্গ সুরভীর কন্ঠে।

চোখের আলো নিভে গেল দীপ্তির।সুরভী জানলোই না,মাসি নয়,দীপ্তি ওর মা।আর তেত্রিশ বছর আগে এই শান্তি মিছিল থেকেই পথ ভুলে সুরভীর বাবা ঢুকে পড়েছিল কোঠাবাড়িতে।

২.
দহন

মাটির প্রদীপে তেল ঢেলে সলতে উস্কে অপেক্ষা করছে গৌরী।ভোরের আলোর।শ্বশুরের নির্দেশে স্বামী মিথ্যে বলে তার গর্ভের কন্যাভ্রূণ কে গতকাল নষ্ট করিয়ে এনেছে।অল্প আলোর আভা ফুটতেই বাইরে পা রাখলো গৌরী।ঘরের চাপচাপ অন্ধকার দূর করতে জ্বলন্ত সলতেটা খড়ের চালে ছুঁড়ে এগিয়ে গেলো সামনের দিকে।

৩.
শো পিস

নারীদরদী লেখিকা হিসেবে বসুধার খুব নামডাক।অসহায় নারীদের পক্ষে গর্জে ওঠে তাঁর কলম।ড্রইংরুমে সাজানো থরে থরে পুরস্কার।বিশিষ্ট পত্রিকার তরফ থেকে আয়োজিত'নারী যন্ত্রনার সেকাল একাল' বিষয়ে বক্তৃতা দিতে যাবে সে।আয়নার সামনে গিয়ে থমকে গেল কপালের বামদিকের ক্ষতটাতে চোখ যেতেই।ক্ষতটা দগদগে এখনো।


৪.
চোর

অসুস্থ অকালবিধবা বড়জায়ের ঘরে ঢুকে রাতের অন্ধকারে বেশকিছু গয়না চুরি করে আনে সৌমিলি।নিজের রুমে এসে গয়নাগুলো লুকিয়ে রাখতে গিয়ে দেখে, বিগত কয়েকবছরে  বিবাহবার্ষিকীতে অলকেশের দেওয়া গয়নার জেরক্সকপি যেন এগুলো।
সৌমিলি মুহূর্তে বুঝে নেয়,তার নিজের শ্রেষ্ঠ সম্পদ বড় জা কবেই চুরি করে নিয়ে গেছে।
                            ......................


সুজাতা জানা এর অনুগল্প 🖋
মায়ের কোল

কিছুদিন আগে নিতারা একটা ভাড়া বাড়িতে এসেছে চাকুরি সূত্রে।নতুন জায়গা নতুন মানুষজন কেমন যেন ভাল না লাগা পরিবেশ। কাজকর্ম সেরে নিতা অনেক সময় ব্যালকনিতে বসে ছোট রানিকে নিয়ে। ওদের ঘরের পাশে ছোট একটা ঝুপড়ি ঘরে পাঁচি আর পুটি তার দিদার সঙ্গে থাকে। সেই ছোট থেকেই দিদা ওদেরকে খুব কষ্ট করে মানুষ করেছে। ব্যালকনি থেকে দেখে কেমন মায়াময় চোখে তাকিয়ে থাকে ওরা। ওদের ওপর কেমন যেন মায়া পড়ে গেছে! পাড়ায় ওদেরকে কেউ ভালো চোখে দেখে না! ওদের নাকি বাপের ঠিক নেই! রানির সঙ্গে ওদের বেশ ভাব।মাঝেমধ্যেই ওরা আসে রানির সঙ্গে খেলতে। কয়কদিন হল নিতার শরীরটা একটু খারাপ। রনিতও বাড়িতে নেই।
মামি তোমার কি শরীর খারাপ?
হ্যাঁ
আমি তোমার ঘরটা পরিষ্কার করে দেব?
না থাক।

নিতা একদিন পাঁচিকে ডেকে জিজ্ঞেস করল তোদের বাবা মা কি বাইরে থাকে? জলভরা চোখে পাঁচি বলে খুব ছোটবেলাতেই বাবা নাকি ওদের ছেড়ে চলে গেছে! আর মা নাকি ভাতে জোগাড়ে গেছে। দিদার কাছেই শুনেছি। মা আর সেই থেকেই আসে নি। সেদিন রাতে দিদা বলেছে মা নাকি আসবে খুব তাড়াতাড়ি!

ওরা দিন কয়েক আর আসে নি।হঠাৎ একদিন এসে বলল; জানো মামি কাল রাত্তি মা এসেছে। আমাদের জন্য নতুন জামা জুতা আরো কত্তকিছু এনেছে। ওদের চোখে মুখে কি তৃপ্তির খুশি।

সেদিন বিকেল বেলায় জেঠিমা চেঁচিয়ে বলল আবার কত লোকের মাথা খাবে তার ঠিক নেই। ওর চরিত্তি ভালো নয়।খারাপ লাগলেও কিছু না বলে নিতা হজম করে নেয় কথাগুলো। জীবনের গভীরে না ঢুকেই মানুষ কত সহজেই নোংরা ছিটিয়ে দিতে পারে অপরের গায়ে!

এরিই মধ্যে গরমের ছুটিতে নিতা দিনকতেকের জন্য বাবার বাড়িতে যায়। ফিরে এসে বাড়ির কাজকম্ম সেরে রানিকে নিয়ে ব্যালকনিতে বসে। খুব আদর করে রানিকে। মায়ের চুমুতে ভরে ওঠে তার গাল। নীচে দাঁড়িয়ে ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে আছে দুই বোন!!

কিরে কি দেখছিস?
ওপরে আয়।
মা আবার চলে গেছে। আর হয়তো আসবে না কোনোদিন!

আচ্ছা মামি আমরা কি খুব খারাপ! আমাদেরকে ছেড়ে সবাই চলে যায়। কেউ ভালোবাসে না, ভালোবাসতে জানে না! জানো মামি তুমি যেভাবে বোনুকে আদর করো আমাদের মা কখনো ওভাবে...! কথাগুলো বলতে বলতে মেয়েটার চোখে নেমে আসে শ্রাবনের ধারা, কালো মেঘ আরো ঘনিয়ে  আসছে...
                                 ...................

              পৃথিবী আবার সুস্থ হবে   


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল
সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা
প্রচ্ছদ - সুকান্ত সিংহ এর পেজ থেকে
ঠিকানা - সুরতপুর, হরিরামপুর, দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
পশ্চিমবঙ্গ ৭২১২১১
কথা - 9434453614



6 comments:

  1. পড়লাম ।খুব ভালো লাগলো

    ReplyDelete
    Replies
    1. কোরাসের সাথে থাকুন।

      Delete
  2. Excellent.... Very... Very.... Heart touching.

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ ভালো থাকুন।

      Delete
  3. শ্রদ্ধেয়
    দুঃখানন্দ ,
    অসাধারণ লাগলো অন্তরা ঘোষের অনু গল্প ,
    অনুগল্পের প্রতিটি কোয়ালিটি আছে তাঁর লেখায় ,
    যে
    লেখা পাঠক কে ভাবতে বাধ্য করে পাঠ শেষ হওয়ার পরে ও . . .সেই লেখকের লেখার শক্তি সম্পর্কে
    কথা হয় না , উনি অনেক দূর যাবেন , যেতে হবেই ওনাকে
    সেই সঙ্গে সুকান্ত বাবু সহ আপনাদের শুভেচ্ছা জানাই
    এতো স্বাদু
    পরিবেশনের জন্যে ,
    আপনারা পল্লবিত হোন
    শুভেচ্ছান্তে
    বিনীত
    দেবপ্রসাদ পাঠক ব্যানার্জি

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভালো থাকুন। কোরাসের সাথে থাকুন।

      Delete

তৃষ্ণা বসাক এর কবিতা // ই-কোরাস ১৮০

  তৃষ্ণা বসাক এর কবিতা ১. মহানির্বাণ   চুন্দ, চুন্দ, এখনি এই শূকর মাংস মাটির গভীরে পুঁতে ফেলো, পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যে এই মাংস পরিপাক করতে প...