Sunday, 8 December 2024

অমৃত মাইতি এর গদ্য // ই-কোরাস ২০৬

 



একজন প্রবীণ ব্যক্তি পুস্তকের সমান

অমৃত মাইতি 


একজন প্রবীণ ব্যক্তি পুস্তকের সমান ।এই অভিমত আমার ব্যক্তিগত। আমি সবসময় সদর্থক চিন্তা ভাবনার মানুষ। মানুষ মানুষকে দিতে পারে। সমাজকেও দিতে পারে। তবে সদিচ্ছার উপর নির্ভর করে সবকিছু। যদি মনে করেন সমাজের জন্য তিনি উৎসর্গীকৃত। তাহলে তিনি সময় ও সমাজের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবেন।

মানুষের মধ্যে জীববৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তি এই দুইয়ের সমাহার রয়েছে। সব মানুষের মধ্যে জীববৃত্তি আছে। আমি এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি না। আমি যে ধরনের আলোচনার সূত্রপাত করেছি সেই ক্ষেত্রে বুদ্ধিবৃত্তি মূল বিষয়বস্তু। একটি শিশু তার জৈবিক এবং শারীরিক বৃদ্ধি

বুঝতে পারে। সে দিনে দিনে বড় হচ্ছে। প্রতিটি মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি আছে। সামাজিক পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির উপর মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। বুদ্ধির বিকাশ বাইরের দিক থেকে বোঝা যায় না। কিন্তু শারীরিক বিকাশ বোঝা যায়। মানুষের বুদ্ধাংক সমান নয়।

আই কিউ বা ইন্টেলিজেন্স কুইটেন্ট পরিমাপের পদ্ধতি আছে। মনোবিজ্ঞানীদের ক্ষেত্রে এই বিষয় একটি জরুরী সিলেবাস। মানুষের যত বয়স বাড়ে তার বুদ্ধি বৃত্তি এবং বুদ্ধাংক বাড়তে থাকে। এইসব ব্যবহারিক জীবনের বিকাশ। বয়স বাড়লে বুদ্ধি বাড়ে বা বুদ্ধাংক গভীর হয় 

একথা সবসময় খাটেনা। বুদ্ধাঙ্ক তীক্ষ হলেই তিনি মানবিক হবেন তিনি শিক্ষিত হবেন, জ্ঞানী হবেন এমন কোন কথা নেই। তাঁর জীবন যাপনের ব্যবহারিক দিক যদি খুব খাটো হয় বা ছোট হয়, তাঁর কাছ থেকে বড় কিছু আশা করা যাবে না এবং তিনি অন্য কোন মানুষকে পথ দেখাতে বা আলো দিতে পারবেন না। যদি তিনি আকাশের মত উদার হন তাহলে তিনি সামাজিক বহু ক্ষেত্রে বিজ্ঞ মানুষের পরিচয় দিতে পারবেন। তাঁর জীবন শিক্ষণীয় এবং গ্রহণীয় হবে। তিনিও একটি বইয়ের মত সমাজের কাছে হয়ে উঠবেন।তোতা পাখির মতো পড়াশোনা করেও বুদ্ধি বাড়তে দেখা যায়নি বা বিচক্ষণতা  দেখা যায়নি। বয়সের তুলনায় অনেক কম হলেও , বুদ্ধাংক অনেকের চাইতে যথেষ্ট বেশি দেখা যায়।। তা সত্ত্বেও যদি ধরে নেওয়া যায় বয়স যত বাড়ে, মানুষ বয়সে যত প্রবীণ হয় তত জ্ঞান অভিজ্ঞতা বুদ্ধাংক বাড়ে। একজন প্রবীণ ব্যক্তির সারা জীবনের জ্ঞান অর্জন বিদ্যা বুদ্ধি সামাজিকতা ব্যবহারিক জ্ঞান সমাজ চেতনা সবকিছুই প্রণতা পায়।বহু বিষয়ে একজন প্রবীণ মানুষের পরিপূর্ণতা দেখা যায়। তখন তিনি একজন পুস্তক। অবশ্য একজন স্থূল বুদ্ধি সম্পন্ন প্রবীণের কাছ থেকে তেমন কিছু আশা করা যাবে না ,যা আপনাকে জ্ঞানী করে তুলতে পারে।একজন প্রবীণ ব্যক্তির সমস্ত গুণাবলী একটি ভরা পুকুরের মতো। পৃথিবীতে সবচাইতে বেশি বই বিক্রি হয় কার্ল মার্কসের। তাঁর জীবনটাই একটি পুস্তক। রামমোহন বিদ্যাসাগর রবীন্দ্রনাথ শরৎচন্দ্র মাইকেল বিবেকানন্দ বঙ্কিমচন্দ্র জীবনানন্দ নজরুল সুকান্ত

এবং দেশে-বিদেশে সমস্ত মনীষীরা কিন্তু এক একজন এক একটি পুস্তক। তাঁদের জীবনের নির্যাস তাঁদেরই রচিত বই। শৈশব থেকে উদার মনের মানুষরা সমাজকে যেভাবে দেখেছেন তার প্রতিফলন পুস্তকের মধ্যে লিপিবদ্ধ হয়েছে এবং পুরো জীবনটা অভিজ্ঞতালব্ধ। তাই আমার মনে হয়েছে একজন প্রবীণ মানুষ একটি পুস্তকের সমান। একটি পুস্তক পড়ে আমরা জ্ঞানী হই। আমাদের অভিজ্ঞতা বাড়ে। বাস্তবের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়ে নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করতে পারি। তখন আমরা সমাজকে নানান ভাবে আলোকিত করার চেষ্টা করতে পারি। পুস্তক আমাদের বন্ধু দার্শনিক এবং পথপ্রদর্শক। ঠিক তেমনি মনীষীরা এমনকি অভিজ্ঞ এবং বিচক্ষণ জ্ঞানী প্রবীণ ব্যক্তিরাও আমাদের বন্ধু দার্শনিক এবং পথপ্রদর্শক। অন্ধকারে নিমজ্জিত সমাজকে, অজ্ঞ মূর্খ কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষকে জাগিয়ে তুলেছেন মনীষীরা আর তাঁদের চেতনাকে বাড়িয়ে তোলার ক্ষেত্রে পুস্তকের বিরাট অবদান। প্রবীণ মানুষ আমাদের অভিভাবক এবং পুস্তকও আমাদের অভিভাবক। একজন প্রবীণ মানুষ সাধারণ অজ্ঞ মানুষের অশিক্ষা কুশিক্ষার সুযোগ নিয়ে কুসংস্কারে  আচ্ছন্ন করে রাখতে পারে; আবার পাশাপাশি সেই প্রবীণ মানুষ জ্ঞানের আলো জ্বেলে দিতে পারে। তাঁদের জন্ম অন্ধ জনের আলো দেওয়ার জন্য। তাঁরা সমাজের বুকে জনজাগরণের ঢেউ তুলতে পারে। বর্তমানে সমাজের মধ্যে যেভাবে ধর্মীয় গোঁড়ামি 

মৌলবাদ মাথা চাড়া দিচ্ছে আর একটা রেনেসাঁসের প্রয়োজন হয়েছে।  ইতিহাসের বিভিন্ন সময়কার জাগরণের পথপ্রদর্শক হিসেবে পুস্তক এবং প্রবীণদের অভিজ্ঞতা আমাদেরকে পুনর্জাগরণের পথ দেখাতে পারে।প্রবীণরাইতো বলবেন নবীদেরকে"ওঠো জাগো"। সময় হয়েছে মনের দরজা খোলো। পুস্তক খুলে দেখো ইতিহাস তৈরী করতে হবে মানুষকেই । সমস্ত জাগরণের ইতিহাস স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে পুস্তকে। একজন সংস্কার মুক্ত সচেতন ধর্মনিরপেক্ষ প্রবীণ মানুষ পুস্তকের সমান। 

শুধু বয়সে প্রবীণ হলেই হবে না। সেই প্রবীণ মানুষ যদি সত্যিই একটি পুস্তক হয়ে উঠতে পারেন তাহলে আমরা একটা নতুন যুগের সৃষ্টির ছবি আঁকতে পারবো। প্রবীণ নবীন উভয়কেই শক্ত করে হাত ধরে এই পচা গলা সমাজের হাল ধরতে হবে। গাইতে হবে রানারের গান।


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪

No comments:

Post a Comment

অমৃত মাইতি এর গদ্য // ই-কোরাস ১০৮

  আমি এক নদী অমৃত মাইতি আমি এক আঁকাবাঁকা নদী। জন্মের পর থেকেই শুধু বাধা বাধা আর  বাধা। বাধার পাহাড় বেরিয়ে আমি কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছি মোহনার ...