Sunday 5 May 2024

ইতি মণ্ডল এর কবিতা // ই-কোরাস ১৭৮


 

ইতি মণ্ডল এর কবিতা 

১.

পতিতা


আমার জঠর থেকে নিষিক্ত ডিম্বানু দিয়ে,

সৃষ্টি করো তোমাদের কাল জয়ী  নারীশক্তি…

                     দেবী দুর্গা। 


শরতের আগমনে তোমাদের মনে অনুরণিত, আগমনীর সুর।

আমার বক্ষ উদর তখন ক্ষুদায় ভরপুর।


তোমাদের দশ পূজা দেবতার অস্ত্রে সুসজ্জিত, 

আমার দেহ সমাজ দেবতারা করে বিবস্ত্র। 


তোমাদের ত্রিশূলধারী বধ করে মহিষাসুর, 

নিশুত রাতে আমার বক্ষ রক্তাক্ত করে তোমাদের কামাতুর অসুর।


তোমাদের সন্তান নতুন সাজে ঢাকের শব্দে মাতে।

আমার ভালোবাসা অবৈধ হয়ে পথে পথে হাত পাতে। 


তোমাদের বাচ্চা শপিংমলে সেরা সেরা খোঁজে।

আমার বাছার মন দূর প্রান্তে অনুদান টুকুই বোঝে। 


তোমরা নব নব সাজে আলোর রোশনাইতে ---

মন্ডপে পাও সুখ।

আমরা রং মেখে খুঁজি খদ্দেরের মুখ। 


রকমারি মিডিয়া আসে আমার ফুটেজ বানাতে, 

ফুটে উঠি লেখকের লেখনীতে।


চড়া আলোর চকমকিতে ব্যস্ত তারা অ্যাওয়ার্ড নিতে। 

আমরা থেকে গেছি সেই অন্ধকার গলিতেই।।



২.

বাঙালিয়ানা


চৈতি শেষে বোশেখ আসে

           কালো মেঘে আকাশ ঢাকে।

তানপুরার ই  ধুলো ঝেড়ে 

           সুর তুলে ঐ তারের টানে।

জীর্ণ পাতা ঝরিয়ে নিয়ে 

          কিশলয়ে লয়ে ভরিয়ে দিয়ে।

পুরানো সুর অনুরাগে 

            বাজে হৃদে বীনার তানে।

নব দিনের সাজের ঢঙে

            বসন ভূষণ আভরণে।

শঙ্খ বাজে দোরে দোরে 

           উৎসবের ই  আমন্ত্রণে।

নূতনেরে আপন করে 

            ভরিয়ে দিয়ে ঘরে ঘরে। 

বাঁচিয়ে রাখি বর্ষে বর্ষে 

             বাঙলা মাকে মনেপ্রাণে।।



৩.

গোধূলি


অস্তরাগের সন্ধ্যা বেলা 

        শেষ আকাশে রঙের মেলা 

দিগন্তে আজ আবির খেলা 

        দূর পারে মেঘ ভাসায় ভেলা। 


বকের দল সারি সারি 

        মেলে তাদের ডানাগুলি

ফিরছে তারা আপন নীড়ে 

         রাঙিয়ে নিয়ে মন মদিরে।


কৃষক কাঁধে লাঙল নিয়ে 

          ফিরবে তার প্রিয়ার কাছে 

দাওয়ায় সেজে বসে আছে 

         সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালবে বলে। 


গাঁয়ের বধূ কলসি কাঁখে 

         ঝুমুর ঝুম্ জলকে চলে 

সিঁথির মাঝে রাঙিয়ে দিয়ে 

         রাখবে যারে আঁচল তলে।।




৪.

নারীদের দিবস


চাইনা এত প্রহসন 

      নারীর স্থান যেখানে 

দাবানলের শিস্ মহল।

       পুরুষের অহংকারে 

যেথায় নারীর দিন কাটে 

        খুবলে খুবলে খাচ্ছে যারা

নারীর দেহ পাটে পাটে। 

        বস্ত্রহীনা হয়ে যেথায় 

নারী হাঁটে পথে-ঘাটে।

       মুখ লুকিয়ে আছে হেথায়

হায়না সম প্রশাসক

       নারী তুমি !যাবে কোথায়? 

ওই দেখো সব শকুন দল।

         নারীর বক্ষ চেপে ওরা করে ওম 

অথচ প্রাসাদের ভিতর হাম্ অর তোম্।

চাইনা এ মৃৎ পাত্রের উৎসব 

চাইনা দিনে দিনে ধর্ষিতা 

নারীদের…এ দিবস।।



৫.

রবীন্দ্রপূজা


কোলাহল!শুধুই কোলাহল!

তার মাঝেই রবীন্দ্র বৈশাখ আসে আর যায় 

আমরা তোমার আলো- আগুনের কথা বলি

কিন্তু তার নীচে দুঃসহ গহীন অন্ধকার... 


মননজুড়ে যে নিবিড় ছায়া

প্রেমহীন জীবন, প্রপঞ্চ ও সুধা 

গরল ও অমৃতে অপূর্ণ গহ্বর 

লাশকাটা ঘরে খু্ঁজি আমার সমর!


ঘাসের মাথায় শিশিরের চোখ জেগে আজও

দিকে দিকে রবীন্দ্রপূজা, উছলে উঠে মহাকাল 

গোড়েমালা ঢাকে তোমার মুখ, নীলকন্ঠ আজ

প্রশ্ন জাগে, রবীন্দ্র পূজা কি শুধুই আড়ম্বর?

                …………………..


সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

প্রচ্ছদ - অভিষেক নন্দী

কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪

Tuesday 30 April 2024

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বন্ধ সিনেমাহলের কথা // ই-কোরাস ১৯

 



পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বন্ধ সিনেমাহলের কথা ১৯

অজন্তা ও মণিহার টকিজ – ডেবরা

শ্রীজিৎ জানা


শুরুতে সিনেমার পোস্টারের কথা বলা যাক। অম্নি চোখের সামনে ভেসে উঠবে সাদা রঙের সঙ্গে নীল, লাল এবং বাদামী রঙের মিশ্রণে লেখা ছায়ছবির নাম। উপরে মাঝ বরাবর লেখা থাকত শো- টাইম। কোণায় লেখা থাকত সগৌরবে চলিতেছে। আর তলায় থাকত সিনেমাহলের নাম। আর নিচের কোণায় লেখা থাকত লিথো প্রেস,ডেবরা। স্মৃতি হাতড়ালে ঠিক মনে পড়বে সেদিনকার পোস্টারের লেখাজোকা। আসলে অজন্তা সিনেমাহলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ওই লিথো প্রেসের কাহিনী। শুধু নিজেদের সিনেমাহলের পোস্টার নয়, জেলার বিভিন্ন সিনেমাহলের পোস্টার ছাপা হত ডেবরা বাজারের ওই লিথো প্রেসে। লিথোর মালিক ছিলেন কিশোরীমোহন দে। একইসাথে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন অজন্তা সিনেমাহল। ডেবরা বাজারের চৌমাথা থেকে দেড়শ মিটার উত্তরে ছিল একসময়ের অজন্তা। এখন তার কোন চিহ্ন নেই। কংক্রিটের কাঠামো উধাও হয়ে বর্তমানে অজন্তার বুকের উপর গড়ে উঠছে গগনচুম্বী বহুতল।


  অজন্তা টকিজের আগে ডেবরা বাজারের মুখে রমরমিয়ে চলত মণিহার সিনেমাহল। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রাধেশ্যাম মাইতি। ষাট- সত্তরের দশকে মণিহার ডেবরা অঞ্চলের সিনেপ্রেমীদের একমাত্র গন্তব্য ছিল। অজন্তার পথচলা শুরু ১৯৮২ সাল নাগাদ। স্থানীয় একটি ভিডিও হল কিনে নেন কিশোরীমোহন বাবু। আর সেই জায়গায় গড়ে তুলেন  অজন্তা।  বালিচক থেকে পাটনা, ট্যাবাগেড়া, পাঁশকুড়া, লোয়াদা, সবং, মাদপুর অব্দি অজন্তার পোস্টার পড়ত। প্রতি শো- ই থাকত হাউসফুল। প্রায় দিন ব্ল্যাক হত টিকিট। দর্শক আর ব্ল্যাকারদের ঝামেলার জন্য হামেশাই পুলিশ ডাকতে হত। অজন্তার শো টাইম ছিল - ১১.৪৫টা, ২.৩০টা এবং ৫.৩০টা। এমনকি নাইট শোও চলত। তবে প্রথম দুটো শো টাইমে উপচে পড়ত দর্শক। ফার্স্ট, সেকেন্ড আর ফ্রন্ট স্টল মিলে অজন্তার সিট সংখ্যা ছিল ৮০০। ব্যালকনিতে সেগুন কাঠের ঠেস চেয়ার ছিল একশর মত। 


কিশোরীমোহন বাবুর হাত ধরে অজন্তার শুরুটা হলেও তাকে এগিয়ে নিয়ে যান তাঁর পুত্র অমলকৃষ্ণ দে। তাঁর সময়ে অজন্তা চূড়ান্তভাবে ব্যাবসা করে। জয় সন্তোষী মা, শোলে,লাঠি, প্রতিবাদ প্রভৃতি সিনেমা টানা তিন মাস করে চলেছে অজন্তা টকিবজে। পনের জন স্টাফ যুক্ত ছিলেন এই সিনেমাহলের সঙ্গে।  বিমল বাবু ছিলেন অজন্তার চিফ অপারেটর। প্রথম দিকে প্রোজেক্টর ভাড়ায় এনে চালালেও পরে নিজস্ব প্রোজেক্টরের মাধ্যমেই ছবি প্রদর্শিত হত। দে পরিবারের বরাবরই সিনেমাহল ব্যাবসার প্রতি আগ্রহ ছিল বেশি। অজন্তার জন্মের আগে দে পরিবারের আরও একটি সিনেমাহল ছিল। তার নাম ছিল বর্ণালী টকিজ। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাট থানার অন্তর্গত মাছিনান গ্রামে অমলকৃষ্ণ বাবু বর্ণালী স্থাপন করেন। তবে সেই সিনেমাহল একক ভাবে চালাতেন না। শেয়ার ছিল আরো কয়েকজনের। বেশ কয়েক বছর চলার পর ২০০০ সাল নাগাদ বর্নালী বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে অজন্তারও ভীড় কমতে থাকে। আশেপাশে সিনেমাহল গড়ে উঠেছিল আগেই। তার উপর মিনি পর্দার ভিডিও হলে দর্শক ভীড় জমাতে থাকে। অজন্তা বন্ধ হয় ২০০৭ সাল নাগাদ। অমলকৃষ্ণ বাবুর পুত্র অভিজিৎ দে জানালেন অজন্তা টকিজের বিশেষ একটি বিষয়," সত্যিই আমাদের সিনেমাহল রীতিমতো ভাল চলছিল। এক এক সময় আমাদের পরিবারের লোকই দেখতে পেত না এত ভীড় হত কোন কোেন ছবিতে। আর ছোট থেকে যেই দৃশ্যটা চোখে আজও লেগে আছে, সেটা ১৫ ই আগষ্ট আর ২৬ শে জানুয়ারীর দিনগুলো। সেদিন সকাল ৮ টা থেকে  ছবি দেখানো হত। সব ছবিই থাকত দেশাত্মবোধক। আর স্টুডেন্টদের জন্য টিকিট মূল্য হাফ করে দেওয়া হত। ওই দিনগুলো আজও চোখে ভাসে"।


তথ্যঋণঃ–

শ্রী অভিজিৎ দে– ডেবরা, পশ্চিম মেদিনীপুর।





সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪



Sunday 28 April 2024

ইতি মণ্ডল এর কবিতা // ই-কোরাস ১৭৭


 


ইতি মণ্ডল এর কবিতা

১.

উত্তরণ


তুমি চাইলে…

সুনীল আকাশে ইচ্ছে ডানা মেলে, উড়তে পারি। 


তুমি চাইলে…

কালো মেঘ সরিয়ে তোমার বুকে, বৃষ্টি হয়ে ঝরতে পারি। 


তুমি চাইলে…

বিজলীর তীব্রতাকে আমার বুকে চেপে,রাখতে পারি।

 

তুমি চাইলে…

মেঘনাদ হয়ে মেঘমালার আড়াল থেকে, লুকোচুরি খেলতে পারি। 


তুমি চাইলে…

তোমার অধর স্পর্শ করে না বলা কথা, হিয়ার মাঝে ধরে রাখতে পারি। 


তুমি চাইলে…

কাব্য ছন্দে সুর তরঙ্গে হাতে হাত রেখে, তোমার চলার সঙ্গী হতে পারি। 


তুমি চাইলে…

তোমার আঁখির মনি হতে আমার আমি, নূতন করে গড়তে পারি।।



২.

ঋণ


বেলা যায় দিন কাটে 

        দিনে দিনে ঋণ বাড়ে 

জীবনের পাতাতে পাতাতে 

    মনটাকে  মানাতে মানাতে। 


হিজিবিজি ভাবনারা 

     উঁকি মারে ফাঁকেতে 

আঁকি-বুকি হয়ে যায় 

       যাপনের স্মৃতিতে।


ফিরে ফিরে আসে যারা

         ডগমগ খুশিতে 

ধরে রাখি তাদেরই 

         মুঠি ভরা আদরে।।



৩.

নকল নবিশ


বাঙালি আমরা 

কাঙালি ভীষণ 

বিদেশ বিভুঁই চলি।


এই ভাষাতেই

হরেক রতন

অবোধ হয়ে ভুলি।


মায়ের দুধে

মানুষ হয়ে

হলাম বিদেশ বাসী।


নব প্রজন্ম 

লোকগীতি ভুলে

রিমিক্স ব্যান্ডে ভাসি।


পাশ্চাত্য নিত্যকর্মে

বিষাদ প্রহর গুনছে

ভোরের রক্ত সূর্য আঁখি।


শুটে-বুটে-হ্যাটে

সাহেবিয়ানা তে

রক্ত পতাকা তলে থাকি।


পারিনা বাঁধতে

আমরা আমি কে

মাতৃভাষার বুননে।


একুশের ঘরে

বেঁচে থাকি তবু

বাঙালি সৃজনে মননে।।



৪.

বোশেখ


গাজন ঢাকে পড়লো কাঠি

চৈতি এবার বিদায় রাতি।

বর্ষ শেষে এই বেলাতে

ছেলে মেয়ে সবাই মাতে।


বোশেখ আসে রুদ্র বেশে

খেরোরখাতার হিসেব শেষে।

আম শাখে; সিঁদুর ঘটে,

দোকান পাটে পূজোয় বসে।


ফল মিষ্টি সবার হাতে

হালখাতাতে ভালোই কাটে।

দিনের দিন যায় যত

রোদের তাপ বাড়ে তত।


পান্তা ভাতে পিঁয়াজ ফেলে

থালা সাজায় সবাই মিলে।

মেঘের দল করে গুড়গুড়

বিকেল হলে বুক দুর-দুর।


বাজ পড়ে মাঠে-ঘাটে

শুকনো পাতা ঝড়ে ওড়ে।

ঝড় শেষে শান্ত আভাস

শান্তি আনে শীতল বাতাস।।



৫.

হারিয়ে খুঁজি


হঠাৎ পাওয়া দিনগুলি সব

সারা জীবন খুঁজি।

হারিয়ে গেলে হারিয়ে যাব 

এই ভাবনায় ডুবি বুঝি।

ফাগুন এলে  অঙ্গনে

মনের গভীর প্রাঙ্গণে।

নানা রঙে রাঙিয়ে দিয়ে

মিলে মিশে নাচে গানে।

হলুদ বিতান মাঠেতে

সবাই মাতে প্রভাতে।

রঙিন মনের স্বপ্ন গুলি

ফুটে ওঠে ফুল কলিতে।



সম্পাদক - দুঃখানন্দ মণ্ডল

সহ সম্পাদক - শ্রীজিৎ জানা

কথা - ৯৪৩৪৪৫৩৬১৪



ইতি মণ্ডল এর কবিতা // ই-কোরাস ১৭৮

  ইতি মণ্ডল এর কবিতা   ১. পতিতা আমার জঠর থেকে নিষিক্ত ডিম্বানু দিয়ে, সৃষ্টি করো তোমাদের কাল জয়ী  নারীশক্তি…                      দেবী দুর্...